ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

নদী ও জলজসম্পদের অপব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
নদী ও জলজসম্পদের অপব্যবহার ইসলামে নিষিদ্ধ ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানীদের মতে, নদীর পানিতেই রয়েছে জীবনের আদি উৎস। আর প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রকৃতির উপকরণ ইত্যাদি মহান আল্লাহতায়ালার কুদরতের অসীম নিদর্শনের অন্যতম।

পৃথিবীতে কোনো কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। সবকিছু মানুষ এবং অন্যান্য সৃষ্টির কল্যাণার্থে সৃষ্টি করা হয়েছে। দুনিয়ায় সবকিছু পরিমিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। নদী মানুষের জন্য আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত, তাই নদী ও জলজসম্পদ ধ্বংস করার অধিকার মানবজাতিকে দেওয়া হয়নি। মানুষ নদীর কোনো একটি উপাদান বিনষ্ট বা অপচয় করতে পারবে না। অযৌক্তিক অথবা বেআইনিভাবে এর ব্যবহার করতে পারবে না। নদীর সাধারণ নাব্যতা ও স্বাভাবিক গতিতে বিচ্যুতি ঘটানো অথবা পরিবর্তন আনা যাবে না। জাতীয় ও সামষ্টিক উন্নয়নের জন্যই এগুলো অত্যাবশ্যকীয় কাজ বলে বিবেচিত। এর অন্যথা অবশ্য অবশ্যই পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ বলে বিবেচিত হবে।
আরও পড়ুন: নদী আল্লাহতায়ালার অশেষ নিয়ামত
সুতরাং নদী বাঁচাতে, নদীকেন্দ্রিক জলজসম্পদ বাঁচাতে চাই পানির নিরবচ্ছিন্ন ও নিরুপদ্রব প্রবাহ। নয়তো যে নদীতে সৃষ্ট এ দেশ, সে নদীর জন্যই বিপর্যয়ের শিকার হতে হবে এর অধিবাসীদের। আসলে নদী ও সাগরের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা পানি সংরক্ষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন এবং তা থেকে বৃষ্টি আকারে পানি পরিশোধন করে পরিমিতভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মজুদ করে রাখেন। আল্লাহতায়ালা যে পানি কুদরত হিসেবে আমাদের দান করেছেন তার সংরক্ষণ ও বিতরণ ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতেই। তিনি ইচ্ছা করলে এ পানি আমাদের নাগালের বাইরেও নিয়ে যেতে পারেন। আবার সব পানিকে লবণাক্তও করে দিতে পারেন। যা আমাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অপ্রতুল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তা না করে পানিকে করেছেন আমাদের জন্য অবারিত ও সহজলভ্য। শুধু তাই নয়, আল্লাহতায়ালা মানুষের সামগ্রিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে পৃথিবীর ৭০ ভাগ পানিতে পূর্ণ করে রেখেছেন, যা কখনও হ্রাস পায় না।

আরও পড়ুন: নদীতে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন
এই পানি সংক্রান্ত কোরআনে কারিমের আরেকটি আয়াত হলো- ‘আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে- তারপর আমি সেই পানি মাটিতে সংরক্ষণ করি, আমি সেই পানি অপসারিত করতেও সক্ষম। ’-সূরা মুমিনুন: ১৮

ইসলামি জীবন দর্শনে নদী-পানি, প্রকৃতি-পরিবেশ, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আচরণ, পরিবেশ সম্পর্কে মৌলিক চিন্তা-চেতনা, পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবেশ সংরক্ষণে নৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা প্রয়োজন। সমকালীন প্রেক্ষাপটে অযাচিত নদীশাসনের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যাও বটে। বলা চলে তা চলমান বিশ্বের অন্যতম একটি সমস্যা।

ইসলামি জীবন-দর্শনের আলোকে পরিবেশ সঙ্কট বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ করতে ইসলামের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রচার এবং প্রসার, পরিবেশদূষণ প্রতিরোধকল্পে ইসলামের মৌলিক শিক্ষার আলোকে আইন ও বিধি-বিধান প্রণয়নে আমাদের এগিয়ে আসা দরকার।

আরেকটি কথা, মানবজাতি এ কারণে অনেক সৌভাগ্যবান যে, দুনিয়ার সব প্রাকৃতিক সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করার কৌশল এবং ইচ্ছাশক্তি মানবজাতিকে প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মানবজাতি ও অন্যান্য সৃষ্টির কল্যাণার্থে দুনিয়ার সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ’ -সূরা আল বাকারা: ২৯

সুতরাং নদী ও জলজসম্পদের অপব্যবহার করা যাবে না। এসব ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ। মাছ আমাদের জলজসম্পদের অন্যতম। একটা সময় বাড়ির কোণে ডোবা, খাল, বিল সব জায়গায় মাছ পাওয়া যেত। এমনকি কাছিম, কাঁকড়া, কুঁচিয়া ইত্যাদি। দিন বদলের পালায় এখন আর ঘরের আঙিনা কেন, খালবিল ছেড়ে নদীতেও মতো মাছ নেই। নদী মরেছে, বিল মরেছে। পানির অভাবে মাছ হারিয়েছে। জলজসম্পদ নাম লেখাচ্ছে সঙ্কটাপন্ন থেকে বিপন্নের তালিকায়। এসব হয়েছে মানুষের অপরিণামদর্শী নানা কাজের কারণে। এখনতো মিঠা পানির প্রায় ২৬০ প্রজাতির মাছ অনেকটাই অস্তিত্ব সঙ্কটে। অথচ একটা সময় পর্যন্ত জলজ সম্পদকে ঘিরেই আমাদের অর্থনীতি, সমাজ, কর্মসংস্থান সর্বোপরি জীবন ব্যবস্থার বিশাল একটি অংশ নির্ভরশীল ছিলো। ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ এ কথার প্রচলন প্রমাণ করে আমাদের জীবন সত্তার সঙ্গে মাছ, নদী এবং জলজসম্পদের সম্পর্ক কতটা অটুট।

কিন্তু বাস্তবতা বড় নিমর্ম। আগের সেই নদী নেই, হারিয়ে যাচ্ছে জলজসম্পদও। ১৯৭২ সালের ৩৭ হাজার কিলোমিটার নদীপথ ২০১০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ হাজার কিলোমিটারে। আমরা যদি নদীখেকো না হতাম, তবে নদীগুলো এত দ্রুত খুন হতো না। নদী বেঁচে থাকলে উপকৃত হতাম সবাই। জেলেরা কর্মক্ষম থাকতেন। বেকাররা কর্মসংস্থান খুঁজে পেতেন। মাছ হতো, গাছ হতো, পাখি আর মানুষের কোলাহলে মুখরিত থাকত নদী তীরগুলো।

অভিজ্ঞদের মতে, জলজসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বিভিন্ন জলজসম্পদ রক্ষার উপায়, পরিকল্পিত ব্যবহারে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক কথায়, দেশীয় জলজসম্পদকে মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। জলজসম্পদ আহরণে যেন কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়- সে বিষয়ে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

আগামী পর্বে: মানবজীবনে নদী ও পানির প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।