ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

হে দয়াময় আল্লাহ! তুমি আমাদের হেফাজত করো

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
হে দয়াময় আল্লাহ! তুমি আমাদের হেফাজত করো ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর একটি রাস্তা ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) বিকেলের পর মধ্যরাতে বাংলাদেশে ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এমনিতেই বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ফলে যখন কোথাও ভূমিকম্প হয়, তখন মানুষ আল্লাহতায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, নিরাপত্তা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করে।

পবিত্র কোরআনের ত্রিশতম পারায় যিলযাল নামে একটি সূরা রয়েছে। যিলযাল শব্দের অর্থ হলো- ভূমিকম্প।

সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে, এর আয়াত সংখ্যা ৮টি।

এ সূরায় বলা হয়েছে, কীভাবে কম্পন, ধাক্কা ও ঝাঁকির মাধ্যমে পৃথিবীকে ভীষণভবে কাঁপিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু পৃথিবীকে কম্পনের মাধ্যমে নাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে- সেটা মানুষ অনুধাবন ও স্মরণ করে ভূমিকম্পের সময়। তাই ভূমিকম্পের সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠেন।
 
আমরা জানি, মানুষের পরীক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন জীবন ও মৃত্যু। এটা কোরআন-হাদিসের অসংখ্য স্থানে বলা হয়েছে।

সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন নানাভাবে। এমনই একটি পরীক্ষা ভূমিকম্প। বস্তুত ভূমিকম্পের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা মানুষকে সতর্ক করেন। যাতে তারা পাপাচারের পথ ত্যাগ করে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে; তওবা করে।

তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় কিংবা কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা যায়, তখন মানুষের উচিত মহান আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে তওবা করা। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা। আল্লাহতায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা।  

আসলে মানুষ হিসেবে শুধুমাত্র বিপদ-আপদে আল্লাহর স্মরণ নয়। প্রয়োজন সবর্দা মনে আল্লাহর ভয়কে জাগ্রত রাখা। বিপদ যেমন দেখা যায় না, কোনো পূবার্ভাস দেয় না- তেমনি মৃত্যু কখন আসবে তাও বলা যায় না। যার মনে এই ভাবনা বিরাজমান, সে কখনও কোনো অন্যায় কাজে জড়াবে না।  

সে হিসেবে বলা যায়, শুধু বিপদকালে আল্লাহর স্মরণ নয়, সর্বাবস্থায় তাকে স্মরণে রাখা। এটা অন্তত শান্তিপূর্ণ অবস্থায় কৃতজ্ঞতার জন্য হলেও জরুরি।

মানুষের সর্বদা এটা মনে রাখা দরকার, বিপদের সময় যিনি সাহায্য করতে পারেন, তিনি বিপদ যেন না হয়, সেই ব্যবস্থাও করতে পারেন।  

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার চাচাতো ভাই হজরত ইবনে আব্বাসকে (রা.) নসিহত করেছিলেন, ‘হে খোকা! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দেব। আল্লাহকে হেফাজত করো, আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন। আল্লাহকে হেফাজত করো, তুমি তাকে সামনে পাবে। যখন প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে। যখন সাহায্য কামনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাবে। জেনে রেখো! পুরো জাতি যদি তোমাকে উপকার করতে একত্র হয় তবুও তোমার কোনো উপকার করতে পারবে না। তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন। এমনিভাবে পুরো জাতি যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্র হয়, তবুও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তবে আল্লাহ যা তোমার বিপক্ষে লিখে রেখেছেন। কলম উঁঠিয়ে নেওয়া হয়েছে আর দফতর শুকিয়ে গেছে। ’ –সুনানে তিরমিজি 

এ হাদিসে আল্লাহকে হেফাজত করো বলে বোঝানো হয়েছে যে, একমাত্র তার কাছেই চাও, তার কাছেই প্রার্থনা করো; তার সঙ্গে কারও শরিক করো না। জীবন চলার পথে কত ধরনের বিপদ আমাদের সামনে আসে। এ সব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সব ধরনের পাপের কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো কাজ করা যাবে না। আর সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে হবে।

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের হেফাজত করো! তুমি আমাদের ওপর দয়া করো। আমাদের যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করো। তুমি নিরাপদে ও শান্তিতে রাখো।  

হে মাবুদ! আমরা তোমার কাছে সব ধরনের রুক্ষ্ম আচরণ, স্বভাব, পাপের কাজ ও অভ্যাস থেকে মুক্তি চাচ্ছি। তুমি আমাদের প্রার্থনা কবুল করো ও আমাদের হেফাজত করো। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২২০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।