ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

কারবালা ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
কারবালা ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: কারবালায় শাহাদাতের ঘটনা মুসলমানদের ইসলামী জাগরণের চিরায়ত চেতনা ও জাগ্রত করেছে। উপমহাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা মাওলানা মোহাম্মদ আলী জাওহার (রহ.) চমৎকার বলেছেন, ‘কতলে হুসাইন আসল মে মরগে ইয়াজিদ থা, ইসলাম জিন্দা হুতা হায় হার কারবালাকে বাদ।’ অর্থাৎ হুসাইনের শাহাদাত মূলত ইয়াজিদের অপমৃত্যু ছিল। ইসলাম পুনর্জীবিত হয় প্রতিটি কারবালার পর।’

কারবালার রক্তভেজা প্রান্তরে হযরত হোসাইন (রা.) ও আহলে বাইতের শাহাদাতের ঐতিহাসিক পটভূমির প্রথম শিক্ষা হচ্ছে, ঈমানদার কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে পারে না। সর্বদা অসত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ করে।

মানবতার স্বার্থে আমরণ সংগ্রাম করে।

কারবালার প্রান্তরে হোসাইন (রা.) আত্মোৎস্বর্গ ও কোরবানির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এতে কারবালা ট্র্যাজেডি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর পথে জীবন-সম্পদ ও অর্থ-বিত্ত বিলিয়ে দিতে উৎসাহ দেয়। প্রতিবাদ ও সংগ্রামী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। কবি নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, ‘ফিরে এলো আজ সেই মহররম মাহিনা, ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না। ’

কারবালার আরেকটি শিক্ষা হলো, পৃথিবীর কোথাও জালিম সাম্রাজ্য যতো শক্তিশালী হোক না কেন, তার পতন হবেই। এর প্রমাণ ইয়াজিদের রাজত্ব। কারণ কিছুদিন পর তার রাজত্বের পতন হয়। কারবালার হত্যাযজ্ঞে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারাও দুই বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যারা ইমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে সংগ্রাম করেছে, আল্লাহর কাছে তাদের অনেক মর্যাদা রয়েছে। আর তারাই সফলকাম। ’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ২০)।

আরেকটি শিক্ষা হলো, জয়-পরাজয় অনেক সময় ব্যতিক্রম হতে পারে। কখনো জেতার জন্য হারতে হয়। ৬১ হিজরির ১০ মুহাররম কারবালায় হোসাইন (রা.) মুসলিম উম্মাহর সামনে জয়-পরাজয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন যে, শহীদ হওয়া মানে জীবনের পরাজয় নয়। বরং সত্য ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করে শহীদ হওয়া অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের। যার নজির তিনি স্থাপন করেছেন।

মোদ্দাকথা, কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনাই আশুরার একমাত্র প্রেরণার উৎস নয়। বরং সৃষ্টির আদি থেকে চলে আসা মহামানবদের লালিত সংগ্রামী প্রেরণা ও প্রতিবাদী চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আশুরা জড়িত। ত্যাগ-বিসর্জন, উৎস্বর্গ, ঐতিহ্য ও শোকের সেতুবন্ধ তৈরি হয়েছে আশুরায়। আশুরা মুক্তির বার্তা নিয়ে ফিরে ফিরে আসে আমাদের মাঝে। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আপসহীন হওয়ার শিক্ষা নিয়ে। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের স্মারক হয়ে।  

সত্যের আওয়াজ সব দিকে আজ ক্ষীণ ও ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে। তাই শুধু প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানসর্বস্ব নয়, চাই আশুরার দৃপ্ত চেতনার সতত জাগরণ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮
এমএমইউ/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।