ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদগুলো ফিরে আসুক আগের রূপে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
মসজিদগুলো ফিরে আসুক আগের রূপে মসজিদগুলো ফিরে আসুক আগের রূপে

জামে আল-নুরি
ইরাকের মসুলের একটা সুপ্রাচীন মসজিদ। জামে আল নুরি। কালো পাথর আর পারস্যের মোজাইকে নির্মিত। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১১৭৩ সালে। মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন নুরুদ্দিন জনকি (রহ.)।

জামে আল-নুরির আগের ও পরের ছবি।  ছবি: সংগৃহীত

তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন।

উম্মাহর শ্রেষ্ঠতর রাহবারদের (পথ প্রদর্শক) একজন ছিলেন। ৪২ টা সুবিশাল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন; যার অর্ধেকই নিজ খরচে। তার ইতিহাসবিজড়িত ঐতিহাসিক এই মসজিদটা বোমা হামলা করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কিছুদিন আগে ইউনেস্কো মসজিদটি পুনরায় নির্মাণ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

জামি হালাব আল-কাবির
আলেপ্পোর বড়ো মসজিদ। যে মসজিদের ভিত্তি গড়ে উঠেছিল খলিফা ওয়ালিদের হাতে। ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে। সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিক ৭১৭ খ্রিস্টাব্দে জুমা পড়িয়ে মসজিদটির উদ্বোধন করেন।

হালবের উমাইয়া মসজিদের আগের ও পরের দৃশ্য।  ছবি: সংগৃহীত

আরও বহুবার পরিবর্ধনে এটি বিশাল রূপ পায়। কিন্তু মসজিদটি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

হালবের উমাইয়া মসজিদের আগের ও পরের দৃশ্য।  ছবি: সংগৃহীত

দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ
৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া বিজয়ের পর দামেস্কের উমাইয়া মসজিদের ভিত্তি স্থাপিত হয়। উমাইয়া খেলাফতকালে ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক দামেস্ক জামে মসজিদ নির্মাণ করেন, তা ছিল অবাক করে দেবার মত। সম্পূর্ণ মেঝে ছিল দৃষ্টিনন্দন পাথরে আবৃত।

দামেস্কের উমাইয়া জামে মসজিদ।  ছবি:সংগৃহীত

দেয়ালগুলির অর্ধেক ছিল শ্বেত পাথরে মোড়া। বাকিটুকু স্বর্ণের টাইলস সাজানো—যেখানে দুর্লভ মণিমুক্তা দিয়ে ফুল, গাছ এবং বিভিন্ন দেশের মানচিত্র অংকিত ছিল। সোনার ঝাড়বাতি ছাড়াও মেহরাবে বিশাল মুক্তা খচিত ছিল। বাতি নিভে গেলে যার আলোয় মসজিদ আলোকিত হয়ে যেত। খলিফা ওয়ালিদ ইবনে মালিক মসজিদটি নির্মাণে ১ কোটি ১২ লাখ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) একে পৃথিবীর পঞ্চম আশ্চর্য বলেছিলেন।

দামেস্কের উমাইয়া জামে মসজিদের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য।  ছবি: সংগৃহীত

সেকালে রোমানরা এই মসজিদ নির্মাণকালে উপঢৌকন হিসেবে রোমান সম্রাটের পক্ষ থেকে বিপুল স্বর্ণ ও মূল্যবান পাথর পাঠিয়েছিল।

মসজিদের প্রান্ত ঘিরে আছে গোরস্তান। আর সেখানেই শায়িত আছেন বেলাল (রা.) এর মতো বহু সাহাবায়ে কেরাম। এবং রাসুল (সা.) এর দুই স্ত্রী। এই মসজিদে তিনবার হামলা হয়েছে। এতে মসজিদটির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।

আল-জামি আল-কাবির ফি জিন্নি
মালির মোপ্তি প্রদেশের আল-জামি আল-কাবির ফি জিন্নি (Djenne)। সুদানি-সুহায়লি প্রাচীন স্থাপত্যরীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। ইতিহাসবিদ আব্দুস সাদি (রহ.) এর ‘তারিখুস সুদান’এ এই মসজিদের প্রসঙ্গ এসেছে। মসজিদের নির্মাণকাল ছিল দ্বাদশ শতাব্দী। ফ্রান্সের সেনারা এই মসজিদটাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বর্তমানে মসজিদটি মাটি-ইটের তৈরি সর্ববৃহৎ মসজিদ।

মালির মোপ্তি প্রদেশের আল-জামি আল-কাবির ফি জিন্নি।  ছবি: সংগৃহীত

বিখ্যাত মসজিদ জামা কাংশোয়াকে দখল করে ফ্রান্স সরকারের জেনারেল ডি রভিগো ‘ক্যাথিড্রাল লি ফিলিপ’ ঘোষণা করেছিল। মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা ও মসজিদগুলো ভেঙে সেগুলোকে গীর্জায় রূপান্তর করে তারা উল্লাস করেছে।

আলজেরিয়ার বিখ্যাত মসজিদ জামা কাংশোয়া।  ছবি: সংগৃহীত

এবার ফ্রান্সের ক্যাথিড্রাল নটরডেমে আগুন লেগেছে সেদিন। অবশ্যই দুঃখজনক সংবাদ৷ চৌদ্দশতকের মাঝামাঝি নির্মিত প্রাচীন স্থাপনা। ইতিহাসে অবশ্যই এর ভাগ-অবস্থান আছে। তাই সবাই শোকে শামিল হচ্ছেন।

কিন্তু এই ক্যাথিড্রালের থেকে জামি আল-নুরি ১৭২ বছরের বেশি পুরনো। জামি হালাব আল-কাবির, ৬২৮ বছরের বেশি প্রাচীন।  দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ ৭০৭ বছর আগের। মালির মোপ্তির সেই মসজিদ ছিল আরও প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। এসব ইতিহাস-ঐতিহ্য তারা গুরুত্ব না দিলেও। ইতিহাস কিন্তু তাদের ধিক্কার জানায় প্রতিনিয়ত।

লেখক: ইসলামী ইতিহাসবিষয়ক গবেষক

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।