ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

রাসুল (সা.)-এর প্রিয় নাতনি উমামা বিনতে আস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
রাসুল (সা.)-এর প্রিয় নাতনি উমামা বিনতে আস ছবি : প্রতীকী

প্রিয়নবী (সা.) এর কয়েকজন নাতি-নাতনি ছিলেন। তাদের মধ্যে সাইয়েদা উমামা বিনতে আবিল আস (রা.) অন্যতম। প্রিয়নবী (সা.) উমামা (রা.)-কে অনেক স্নেহ ও আদার করতেন। তাকে নিজের আশপাশে রাখতেন।

হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) যখন নামাজ পড়তেন, তখন উমামা বিনতে আবিল আস প্রিয় নবীর ঘাড়ে চড়তেন। যখন তিনি রুকুতে যেতেন, তখন উমামাকে নামিয়ে দিতেন।

যখন কিয়াম করতেন, তখন আবার ঘাড়ে তুলে নিতেন। (বুখারি, হাদিস: ৫০৩)

মায়া ও ভালোবাসার কারণে নবী (সা.) তাকে বিভিন্ন কিছু উপহার দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, ‘একবার রাসুল (সা.)-কে পুতির একটি মালা উপহার দেওয়া হয়। মালাটিতে সোনার প্রলেপ চিকচিক করছিল। ওই সময় রাসুল (সা.) এর স্ত্রীরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করছিরেন। আর উমামা বিনতে জয়নাব বিনতে রাসুলিল্লাহ (সা.) ছোট্ট শিশু ছিলেন। তখন তিনি ঘরের পাশে মাটি নিয়ে খেলাধুলা করছিলেন। অতঃপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘মালাটি তোমাদের কাছে কেমন লাগছে?’ সবাই মালাটির দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, এরচেয়ে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন মালা আমরা আগে দেখিনি। তখন রাসুল (সা.) সেটি হাতে নিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার কাছে ঘরের সবচেয়ে প্রিয় মানুষের গলায় মালাটি  আমি পরিয়ে দেবো। ’ আয়েশা (রা.) বলেন, তখন দুশ্চিন্তায় আমার ও রাসুল (সা.) এর মাঝখানের দূরত্বটুকু অন্ধকারাচ্ছ্ন্ন হয়ে যায়। আমি ভাবছিলাম, যদি তিনি আমি ছাড়া অন্য কোনো স্ত্রীকে মালাটি পরিয়ে দেন! অতঃপর রাসুল (সা.) এগিয়ে গিয়ে উমামা বিনতুল আসের গলায় পরিয়ে দেন। এতে আমার আনন্দ লেগেছিল। (ইবনে সাআদ ফিত তাবাকাত, আল-ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২৩১)

অন্য এক বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসি (রা.) রাসুল (সা.)-কে স্বর্ণের আংটি উপহার দেন। তখন রাসুল (সা.) সেটি উমামা (রা.)-কে দিয়ে দেন। (আল-ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২৩১)

উমামা বিনতুল আসের জন্ম
নিজের নানা ও প্রিয়নবী (সা.) এর নবুওয়ত লাভের পর জন্ম গ্রহণ করেন উমামা। শৈশব থেকেই ইসলামের শিষ্টাচার ও সৌন্দর্যে গড়ে ওঠে তার জীবন। অষ্টম হিজরিতে তার মা জায়নাব (রা.) এর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় মা তার জন্য শুধু রেখে গিয়েছিলেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের ভালোবাসা।

উমামা (রা.) রাসুল (সা.)-এর নাতি-নাতনিদের মধ্যে সর্বপ্রথম জন্ম নেন। তিনি সবচেয়ে অভিজাত বংশের অধিকারী। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও মানবজাতির মহানায়কের ঘরে তার জন্ম। তার নানি খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.)। তার মা প্রিয়নবীর ঘরের প্রথম সন্তান।

তার পিতা ছিলেন অনন্যতার অধিকারী
উমামা (রা.) এর পিতা আল-আস ইবনে রাবি (রা.) রাসুল (সা.)-এর জামাতা। তিনি ছিলেন চারিত্রিক সৌন্দর্যে বিভাময় হাতেগোনা কয়েকজনের অন্যতম। কুরাইশের ব্যবসায় তার সততা ও দৃঢ়তা এবং প্রত্যেকের হক আদায়ের কারণে তাকেও ‘আল-আমিন’ বলা হতো।

আবুল আসের সঙ্গে রাসুল (সা.) এর বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি রাসুল (সা.) এর সঙ্গে দেখা করার জন্য তার ঘরে আসতেন ঘনঘন। তার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সে আমার সঙ্গে কথা বলেছে, তো সত্যই বলেছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তো পূর্ণই করেছে। ’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৪৯১)

পিতার মৃত্যুর পর উমামা (রা.)
বারো হিজরিতে যখন উমামার বাবা আল-আস ইবনুর রাবি (রা.) ইন্তেকাল করেন, তখন তার দেখা-শোনার জন্য তিনি জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)-কে অসিয়ত করেছিলেন। আর তিনি ছিলেন উমামার খালু।

হজরত ফাতিমা (রা.)-এর মৃত্যুর পর জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) তাকে আলী (রা.) এর কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন। হজরত ফাতিমাও মৃত্যুর আগে আলী (রা.)-কে অসিয়ত করেছিলেন, তিনি যেন তার (ফাতিমার) বড় বোনের কন্যা উমামাকে বিয়ে করেন। আর হজরত আলী (রা.) স্ত্রী ফাতিমার কথার অনুসরণে তার মৃত্যুর পর উমামা (রা.)-কে বিয়ে করেন। বিয়ের ব্যবস্থাপনা করেন জুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.)।

আলী (রা.) শহিদ হয়ে গেলে তাকে মুগিরা বিন নওফল বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিব বিয়ে করেন। সে ঘরে ইয়াহইয়া নামে তার এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সন্তানের নামে তার উপনাম ছিল। (আল-ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২৩১)

উমামা বিনতে আস ইবনুর রাবি (রা.) এর মৃত্যু হয় মুগিরা বিন নওফল বিন হারেস বিন আবদুল মুত্তালিব (রা.) এর ঘরে। তার মৃত্যু তারিখ নিয়ে ইতিহাসে মতানৈক্য রয়েছে।

তথ্যঋণ:
এক. বুখারি, হাদিস: ২৯৪৩; মুসলিম, হাদিস: ২৪৪৯
দুই. আত-তাবকাত আল-কুবরা, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ৩১
তিন. আল-ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২৩১
চার. আল-ইস্তিআব ফি মা‘রিফাতিল আসহাব, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ১৭৮৯
পাঁচ. মুসনাদ আহমদ, খণ্ড: ৬, পৃষ্ঠা: ১০১, (ব্যাখ্যা: শোয়াইব আল-আরনাউত)
ছয়. কিস্সাতুল ইসলাম। সাত. আ‘লামুন নিসা

ইসলাম বিভাগে লিখতে পারেন আপনিও। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।