ঢাকা: আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আইন-আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং বিচারকের সঙ্গে অপেশাদারিত্বমূলক ও আক্রমণাত্মক আচরণের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট প্রশ্নে রেখে বলেছেন- আইন ব্যবসা আর চকবাজারের ব্যবসা কী এক।
জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি না সূচক জবাব দেন।
এর আগে হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজুল হকসহ অন্য আইনজীবীরা।
লিখিতভাবে এ ক্ষমা চাওয়ার পর বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি ২৩ পর্যন্ত মুলতবি করেন।
ওইদিন এই তিন আইনজীবীকে ফের হাইকোর্টে হাজির হতে হবে।
আদালতে তিন আইনজীবীর পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, বার কাউন্সিলের সদস্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল।
এর আগে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের এসব অভিযোগ প্রধান বিচারপতির নির্দেশে উপস্থাপনের পর ২৫ জানুয়ারি তাদেরকে তলব করেন হাইকোর্ট ।
অপর দুই আইনজীবী হলেন, মো. আজহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলম।
একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজুল হকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ আদেশ অনুসারে তিন আইনজীবী হাইকোর্টে হাজির হন।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, আইন ব্যবসা আর চকবাজারের ব্যবসা কী এক?
জবাবে মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন- না না, এটা ব্যবসা না।
তখন আদালত বলেন, বার কাউন্সিলের মিটিংয়ে কি হলো?
জবাবে সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন- প্রথমে আমার বার নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শুনলাম। ওনারা ওনাদের বিভিন্ন বিষয়ে বললেন। তারপর আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান কথা বলেছেন। তারা বলেছেন কোনো সমস্যা হলো বার কাউন্সিলের একটি কমিটি আছে সেখানে জানাতে। আর স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রীর কাছে যাবে। নিজস্ব বারে যেন রেজ্যুলেশন না নেওয়া হয়। এটার ইমেডিয়েট ইফেক্ট হয়েছে কুষ্টিয়া বারে। সেখানে একটা সিমিলার সমস্যা হয়েছে। সেটার সমাধা্ন হয়েছে। এখন এশিয়াতে এ নিয়ে একটি অবস্থানে এসেছে। আমাদের এখানেও রায়ের মাধ্যমে উভয়পক্ষের (বার-বেঞ্চ) জন্য একটি গাইডলাইন আসলে ভালো হবে। দুই পক্ষ কি করতে পারবে আর কি করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, যে চারটা ঘটনা ঘটেছে আমরাতো আগে এ রকম দেখিনি। আগে কিছু হলে হাইকোর্ট পর্যন্ত আসতো না। ঘটনা হলে বারের সিনিয়র মেম্বার দুই মিনিটের মধ্যে হাতজোড় করে ফেলছে। তখন সব ঠান্ডা।
গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ার একটি পত্র পাঠান।
সেই পত্রে বলা হয়, ‘‘গত ২৮ নভেম্বর নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের এক মামলায় আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিই। এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ওই মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের অপরাপর সহযোগী আইনজীবীরা অত্যন্ত মারমুখী হয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়িয়ে বিকট শব্দে আমার প্রতি বিরূপ উক্তি উচ্চারণসহ হামলা করার প্রয়াস চালায়। তারা হুমকি দিয়ে বলে, ‘জামিন দিয়ে নেমে যা। সরি বল। চাকরি করার দরকার নাই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক। কোথা থেকে পড়াশোনা করেছো, আইন-কানুন জানো না। নীলফামারীর বার খুবই ভয়ংকর, এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি। কোথা থেকে এসেছো, এসেই উল্টা-পাল্টা আদেশ দাও। ’
এই পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সঙ্গে কোনোরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে আমার খাস কামরায় চলে যাই। খাস কামরায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করার সময়েও বার সভাপতি আইনজীবী মমতাজুল হক, সহ-সভাপতি আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম এবং আইনজীবী ফেরদৌস আলম আমাকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ’’
এটি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপন করেন। গত ৩ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি অভিযোগটি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৩
ইএস/এসএ