ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি ও অভিযোজন

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি ও অভিযোজন

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিয়ে অনেক আলোচনা-বিতর্ক হচ্ছে। একের পর এক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।

কিন্তু এর প্রত্যাশিত ফল আমরা পাচ্ছি না।

জলবায়ু উঞ্চতা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত। কোনো দেশে হয়তো কম কেউ বা বেশি। কিন্তু এর প্রভাব থেকে রেহাই পাবেনা কেউ। যে হারে জলবায়ু উষ্ণতা বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের জীবনপ্রবাহ কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।

জাতি সংঘের এক হিসাব মতে, যদি জলবায়ুর উষ্ণতা এই গতিতে বাড়তে থাকে, তাহলে সমুদ্র ও নদীর স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ১ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অভ্যন্তরীণভাবে স্থানচ্যুত হবে। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। বরং বাংলাদেশের মতো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর জন্য এর প্রভাব আরো বেশি।  

উষ্ণতার এ হার যদি অব্যাহত থাকে তবে বাংলাদেশ এর মোট স্থলভাগের ১০ শতাংশ ভূমি হারাবে। এটি আমাদের সীমিত ভূমির ওপর জলাবায়ু পরিবর্তনের এক প্রত্যক্ষ প্রভাব। এর পরোক্ষ প্রভাব আরো ব্যাপক।

মরুকরণ, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ এর রয়েছে আরো নানা প্রভাব। জমির উর্বরতা হ্রাস পাবে। ফলে, উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়বে। এদিকে রয়েছে অধিক জনসংখ্যার চাপ। একদিকে সম্পদের সংকট, অন্যদিকে জনসংখ্যার আধিক্য। এ দুয়ে মিলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক অপরিহার্য দুর্ভোগ। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণের কোনো বিকল্প নেই।

এমনিতেই বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ প্রবণ রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে এর মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। বন্যা ও সাইক্লোনের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপস্থিতি আরো বেড়ে যাবে। দুর্ভিক্ষ মহামারি বাসা বাধবে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়। বরং মানুষের সাথে সাথে অন্য সব জীবও একই ক্ষতির মুখোমুখি হবে। বিশ্ব হারাবে জীববৈচিত্র। আমাদের দেশে বনায়নের জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। ফলে সবুজের চিহ্ন মুছে যাওয়া উপক্রম হচ্ছে। বৃক্ষরোপন ও সবুজায়নের কোনো পদক্ষেপ নেই। এর ফলে ক্রমেই পানির স্তর নীচে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রভাবতো আছেই।  

আমাদের জন্য এমন আরো অনেক নির্মম বাস্তবতা হয়তো অপেক্ষা করছে।

কার্বন উদগীরনের মাত্রা কমিয়ে আনার ব্যাপারে বিশ্ব এখনো ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। কিন্তু বৈশ্বিক ঐক্য ছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা করা যাবেনা।

কিন্তু এই যে জলবায়ু পরিবর্তন তার জন্য সব রাষ্ট্র সমানভাবে দায়ী নয়। নিশ্চিতভাবে উন্নত রাষ্ট্রগুলোই বেশি দায়ী। কিন্তু হতাশাজনক হলো যে তারা এর দায়িত্ব বহন করছে না। গ্রীন-হাউজ গ্যাস উদ্গীরণের জন্য দ্বায়ী রাষ্ট্রগুলো এ বিষয়ে তাদের করণীয় নিয়ে উদাসীনতা প্রদর্শন করছে।

বাংলাদেশ একটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্র। তাই বাংলাদেশের মতো অধিক ঝুকিঁপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোকে এর বিরুদ্ধে জোড়ালো ভুমিকা রাখতে হবে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর সমস্যাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকিঁ মোকাবেলা বা এর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এর যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য।

একই সাথে  টেকসই উন্নয়নকেও আমরা এড়িয়ে যেতে পারবোনা। পরিবেশকে রক্ষা করেই টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।

একথা সত্য, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে রোধ করতে পারবোনা। কিন্তু এর মাত্রাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। সেই সাথে অভিযোজন কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারি।

অভিযোজন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে হলে স্থানীয় জ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় প্রয়োজন। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে উন্নত বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যমান জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তর করতে হবে। সফল অভিবাসন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই। সীমিত ভূমিতে অধিক উৎপাদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভূমির উর্বরতা ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিস্বরুপ কোনো উৎপাদন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  

নানামুখি পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকিঁ মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।