ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বিচারকদের চাকরিবিধির ‘ফাইনাল ড্রাফট’ সুপ্রিম কোর্টে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
বিচারকদের চাকরিবিধির ‘ফাইনাল ড্রাফট’ সুপ্রিম কোর্টে  বক্তব্য রাখছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার ফাইনাল ড্রাফট তৈরি করে সোমবার  সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

আনিসুল হক বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট নিয়ে আমি এতটুকু বলতে পারি, গত বৃহস্পতিবার আমরা বসেছিলাম এবং আমরা এ ব্যাপারে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে তাতে আমাদের যে ক্ষুদ্র মতভেদ ছিল সেটা দূর হয়েছে এবং সমাধান হয়েছে।



তিনি বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে যে ড্রাফটটি এগ্রি করেছি সেটার ফাইনাল করা হয়েছে এবং গতকাল সেটা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে মুহূর্তে ফিরে আসবে, আমি আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেটা মাহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব।

‘বিচার বিভাগে দ্বৈতশাসন চলছে’ সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির এমন কথা নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই দেখবেন যখন এটা (বিধিমালার গেজেট) বেরুবে, দ্বৈতশাসন আছে কিনা এবং দেখেন, উনার এসব কথার প্রত্যেকটার জবাব আমি দিতে পারব না। তার কারণ হচ্ছে আমি দেব না। আরেকটা কথা হচ্ছে যে, আপনারা দেখেছেন যে, কত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়েছে প্রধান বিচারপতি (প্রাক্তন)  চলে যাওয়ার পরে। আমার মনে হয় বাকিটুকু আপনারা বুঝে নিতে পারবেন।

এর আগে ১৬ নভেম্বর রাতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। ওইদিন বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির হুকুম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ গেজেট প্রকাশ করবো।   তিনি অনুমতি দিলে ৩ ডিসেম্বরের আগে গেজেট প্রকাশ করতে পারবো। এখন রাষ্ট্রপতির অনুমতির অপেক্ষা।

চলতি মাসের ৫ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞার নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের করা চার সপ্তাহের সময়ের আবেদনের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছিলেন, আইনমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বসতে চান। শুনানি শেষে গেজেট প্রকাশে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের ৪ সপ্তাহের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময় বাড়ান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আর গত ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময় বাড়িয়েছিলেন।

এর আগে গত ৬ আগস্ট দুই সপ্তাহের সময় দিয়ে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

আপিল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি।

এরপর সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন আইনমন্ত্রী। পরে ফের ২৭ জুলাই বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

কিন্তু গত ৩০ জুলাই সকালে ছয় বিচারপতির বেঞ্চে শুনানিকালে আইনমন্ত্রীর দেওয়া খসড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হলো। তিনি খসড়া দিয়ে গেলেন। আমি তো খুশি হয়ে গেলাম। যদিও খুলে দেখিনি। কিন্তু এটা কী!’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৭
ইএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।