খুলনা: মধুকে সর্বরোগের মহৌষধ বলা হয়ে থাকে। নিয়মিত মধু খেলে বহু রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে খাঁটি মধু চেনার উপায় জানা থাকা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতি থেকে বাঁচতে জেনে নিতে হবে খাঁটি মধু চেনার সাধারণ কিছু উপায়।
মধু চেনার সঠিক কিছু পরীক্ষা:
একক কোনো পরীক্ষার সাহায্যে মধুর বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা বেশ দুরূহ একটা ব্যাপার। তবে অনেক অভিজ্ঞতার কারণে স্বাদ ও ঘ্রাণ দেখে মধুর পিউরিটি বুঝতে পারেন।
সুক্রোজ পরীক্ষা: বিশুদ্ধ মধুতে সুক্রোজের পরিমাণ পাঁচের অধিক হয় না।
পোলেন টেস্ট: মাইক্রোসকোপের সাহায্যে মধুতে পোলেনের উপস্থিতি দেখে মধুর বিশুদ্ধতা অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায়। এর পরিমাণ ২৫ হাজার পিচ/গ্রাম মিনিমাম। পোলেন টেস্টের মাধ্যমে মধুটি কোন ঋতুতে এবং কোনো ফুল হতে সংগ্রহ হয়েছে তা নির্ণয় করা যায়।
ময়েশ্চার পরীক্ষা: রিফ্রেক্টোমিটারের সাহায্যে মধুতে জলীয় অংশের শতকরা হার নির্ণয় করা যায়। এই শতকরা হারের তারতম্য হতে মধুর বিশুদ্ধতার ধারণা নেওয়া যেতে পারে। যেমন- সরিষা ফুলের মধুতে জলীয় অংশের পরিমাণ ১৯-২১, লিচু ফুলে ২০-২২, সুন্দরবনের মধুতে ২২.৫-২৪.৫।
এইচএমএফ (হাইড্রক্সি মিথাইল ফারফুরাল): মধুতে সরাসরি তাপ দিলে এর ফ্রুক্টোজ ভেঙে এইচ এম এফ তৈরি হয়। এইচ এম এফ হলো সাইলেন্ট এনিমির পরিমাণ মধুতে বাড়লে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হয়। উন্নত বিশ্বে এর মান নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ মিলিগ্রাম/কেজি ম্যাক্সিমাম। ইউ.ভি এসপ্রেক্টোফটোমিটার দিয়ে পটাশিয়াম ফেরো সায়ানাইট, সোডিয়াম বাই সালফাইট, জিংক অ্যাসিটেটের সাহায্যে মানবের করা যায়। তবে মধু অনেকদিন রেখে দিলেও এইচ এম এফ বাড়ে। তাপ দিলে এইচ এম এফ দ্রুত বাড়ে।
সাধারণ মানুষের জন্য মধু চেনার সহজ উপায় হলো যার থেকে মধু নেওয়া হবে উনার বছরব্যাপী সংগৃহীত মধু যদি বৈচিত্র্যময় হয় বিভিন্ন রং ভিন্ন ঘনত্ব ও ব্যতিক্রমী স্বাদের হয়। তবে অনুমান করা যায় উনি খাঁটি মধু বিক্রয় করেছেন।
খাঁটি মধু চেনার প্রচলিত পদ্ধতির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই:
খুলনা জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে প্রচলিত, ইউটিউব বা ফেসবুকে আমরা খাঁটি মধু চেনার যেসব পদ্ধতি দেখি পানি দিয়ে পরীক্ষা, আগুন দিয়ে পরীক্ষা, পিঁপড়া পরীক্ষা, চুন দিয়ে পরীক্ষা সেগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আর এসব দিলে খাঁটি মধু চেনা সম্ভব নয়। খাঁটি মধু চিনতে হলে একমাত্র ল্যাব চেষ্টা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা ও খুলনাঞ্চল সুন্দরবনের মধুর জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলের মধুর সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা থাকে। সেই চাহিদা অনুযায়ী সুন্দরবনে মধু কম উৎপাদন হওয়ার কারণে একটি চক্র গড়ে ওঠেছে যারা চিনি, ফিটকিরি, রং, ফেলেবার এবং এক ধরনের গ্লুকোজ সিরাপ দিয়ে তারা কৃত্রিম মধু তৈরি করেন। যা বিভিন্ন ব্যান্ডে তারা বাজারজাতকরণ করে থাকে। সাধারণ ভোক্তা যা কিনে প্রতারিত হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে প্রায় নয়টি অভিযান পরিচালনা করেছে। নিয়মিত মামলা হয়েছে ব্যাপক পরিমাণ ভেজাল মধু আটক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড এখনও চলছে। তাদের কর্ম পদ্ধতি বদলেছে কিন্তু কার্যক্রম চলমান আছে।
মোকলেছুর রহমান বলেন, খাঁটি মধু বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে কেনা উচিত। যে সোর্স আপনার পরিচিত, ফেসবুকে পরিচিত, একটা মোবাইল নাম্বার আছে। একটা ঠিকানা আছে। অনলাইন থেকেও মধু কেনা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তার পেজটা ভালো কি না তার রিভিউ কেমন এসব দেখে তারপর কেনা উচিত। ফোনে বা অল্প দামে মধু কেনা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মধু নিয়মিত সেবন করা উচিত। এটা রোগ প্রতিষেধক। ভেজালকারীদের সংখ্যা সীমিত। অনেক ভালো ব্যবসায়ী রয়েছেন। মধু সেক্টরটি আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। বাচ্চাদের ওষুধ তৈরি হচ্ছে। এ সেক্টরটিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ভেজাল এড়িয়ে নিয়মিত খাঁটি মধু খেতে হবে। ভেজালকারীদের প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা যারা দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত মনিটরিং করছি, আশা করছি, বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো সর্বসাধারণের সহযোগিতায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
এমআরএম/এএটি