ঢাকা: বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো যেন কোনো ধরনের ভয়ভীতি ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভাবে সভা-সমাবেশ করতে পারে, সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ বাড়াচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো রাজনৈতিক সমাবেশের অধিকার নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে।
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে এরই মধ্যেই বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার যেন সব রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাবেশ করতে দেয়, সে লক্ষ্যে তাগিদও দিয়েছে তারা। ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকরাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিয়ে সরব রয়েছেন।
সভা-সমাবেশের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট ভউল এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০২২ সালের জুলাই থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বিরুদ্ধে হামলা ও প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের ফলে মৃত্যু ঘটছে। আমি বাংলাদেশের ঘটনাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য দেশ হিসেবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে জাতিসংঘে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে নিহত ও আহতের ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আইনের শাসনকে সম্মান, সহিংসতা, হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকার ১৫টি কূটনৈতিক মিশন থেকে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এ মিশনগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান, ইতালি, জাপান, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
নেড প্রাইস বলেছেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখাতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের পেছনে রয়েছেন একজন বাংলাদেশের সাংবাদিক। সেই সাংবাদিকের নাম না নিয়ে ড. মোমেন বলেন, ওই সাংবাদিকের হোয়াইট হাউস এবং জাতিসংঘে দুই জায়গাতেই এক্সেস আছে। বাংলাদেশে কিছু হলেই উনি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন করার ফলে নিজেই উত্তর দেন। উত্তরটা সেই সাংবাদিক লিখেও দেন। অনেক সময় উনি আগে-ভাগে লিখেও দেন, টেক্সট করেন। ঢাকায় কিছু হলেই সেটা ওয়াশিংটনে চলে যায়।
ড. মোমেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেটা চায়, সেটা হলো কোনো সংঘাত না হোক, আমরাও কোনো সংঘাত চাই না। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের রাস্তায় সভা করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো অনুমতি দেয় না, সেটা তাদের সিস্টেম। আমরাও আমাদের পথচারীদের বাধা দিতে চাই না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
টিআর/জেএইচ