চাঁপাইনবাবগঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। এ স্লোগানকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার আমবাগানগুলোর পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষে শুরুতেই বাম্পার ফলন হয়েছে।
আমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে বাগানের গাছের নিচে এ মিষ্টি কুমড়া চাষ হচ্ছে। এ ধরনের ফসল এ বছরই প্রথম চাষ শুরু হয়েছে। আমগাছে দেওয়া সেচ ও সার দিয়ে মিষ্টি কুমড়া যেমন উৎপাদন হয়, তেমনি মিষ্টি কুমড়ার পাতা আমগাছের সার হিসেবে কাজে লাগছে। এতে করে কৃষকদের একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমছে, অন্যদিকে আমের পাশাপাশি সবজি উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ।
ভোলাহাট উপজেলার একমাত্র অর্থকারী ফসল আম। চারদিক জুড়ে শুধুই আমের বাগান। মৌসুম আসলে আম পাওয়া যায় বাগানে। বাকি সময় বাগানগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। এসব আমবাগান ফাঁকা না রেখে সাথী ফসল হিসেবে অল্প খরচে বেশি লাভবান করতে কৃষকদের মিষ্টি কুমড়া চাষে উৎসাহিত করে ভোলাহাট উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
উপজেলার মুশরিভূজা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ধারে সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে মিষ্টি কুমড়া। এগুলো ট্রাকে ভর্তি করে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলাহাট উপজেলায় এ বছর ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর আম বাগানের মধ্যে ১২০ হেক্টরে মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হচ্ছে। জেলায় এ ধরনের উদ্যোগ এটায় প্রথম।
মুশরিভূজা গ্রামের আম চাষি মো. কুরবান আলী বলেন, আমি ১০ বিঘা আমবাগানের পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। আমার বিঘা প্রতি মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু খরচ বাদে ৪০ থেধকে ৫০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, এর আগে আমবাগানের পতিত জমি থেকে কোনো ফসল উৎপাদন করতে পারিনি।
একই এলাকার অপর চাষি মো. আবুল বলেন, গত বছর আমবাগান থেকে তেমন একটা লাভ পাইনি। আর তার আগের বছর লোকসান গুনেছি। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে লোকসান পুষিয়ে নিতে আমি আমবাগানে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বিঘাপ্রতি বাড়তি আয় পাচ্ছি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পাশাপাশি আগামী আম মৌসুমে আমগাছে কম সার প্রয়োগ ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা পাব বলে আশা করছি। ।
মিষ্টি কুমড়া চাষি মো. আজম আলী জানান, এ বছর আমবাগানের পতিত জমিতে ১৫ বিঘায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছি। আমবাগানে এমন সবজি চাষ কল্পনাও করিনি। আর ক্রেতার চাহিদা থাকায় মিষ্টি কুমড়া জমি থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সুলতান আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। এরই ধারাবাহিকতায় আমের এলাকা ভোলাহাট উপজেলার আমবাগানের পতিত জমিতে অত্যন্ত কম খরচে মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের। জেলায় এবারই প্রথম আম বাগানসহ বিভিন্ন ফসলের জমির ভেতর সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন কৃষক। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া চাষে আম গাছের উপকারও হচ্ছে ।
তিনি আরও বলেন, আমবাগানের পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়া চাষে বিঘাপ্রতি ৫০থেকে ৬০ মণ ফলন পাওয়ায় আম চাষিদের মন চাঙা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন ফসলের মধ্যে আরও ৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২২
জেএইচ