সিরাজগঞ্জ: প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে আসা ঘণ কুয়াশার পর সিরাজগঞ্জে বইতে শুরু করেছে শৈত্য প্রবাহ। কদাচিৎ দিনে একবার সূর্যের দেখা মিললেও সেটার স্থায়ীত্বকাল এক ঘণ্টার বেশি নয়।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরের দিকেও একাধিক গরম কাপড় জড়িয়ে শীতে জুবুথুবু হয়ে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ আফজাল হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই এমন শীত পড়েনি। এবার খুব বেশি শীত পড়ায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। পেটের দায়ে তবুও রিকশা চালাতে হচ্ছে।
সাইফুল নামে অপর এক রিকশাচালক বললেন, কাজ না করলে কিস্তি ওয়ালা তো ছাড়বে না।
সমশের আলী ও রফিকুল বলেন, ‘যাগোরে দিন আইন্যা দিন খাওয়া, তাগোরে আমার শীত-গরম কীসের?’
ঝুড়িতে কাঁধে করে কমলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন বৃদ্ধ আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘শীতের জন্য দু’দিন বইস্যা আচিল্যাম, দেহি সংসার আর চলে না। তাই আইজক্যা কষ্ট কইর্যা বাইর অইল্যাম। ’
এদিকে ফুটপাতে শীতবস্ত্রের দোকানে দেখা গেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড়। তবে দাম বেশি হওয়ায় গরম কাপড় কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।
ফুটপাতের গরম কাপড় বিক্রেতা নায়েব আলী, আব্দুর রাজ্জাক ও জুয়েল রানা বলেন, এবার পুরাতন কাপড়ের বেল্টের দাম বেশি। প্রতি বেল্টে ৩ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এ কারণেই আমাদের বেশি দামে বেঁচতে হচ্ছে।
এদিকে যমুনা নদী অধ্যুষিত মেছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, চরাঞ্চলে প্রচণ্ড শীতে কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। সরকারের পক্শ থেকে এক দফায় কিছু কম্বল দেওয়া হলেও চাহিদা অনুযায়ী সেটা অনেক কম।
কাজিপুরের মনসুর নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রাজমোহর বলেন, এবার প্রচণ্ড শীত পড়ায় মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমরা কিছু শীতের কাপড় পেয়ে সেগুলো বিতরণ করেছি। আরও গরম কাপড় প্রয়োজন।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) তাড়াশ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবেই তাপমাত্রা কমছে। গত কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবেই তাপমাত্রা কমছে। গত দু’দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১১.২ ও ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়ার রেকর্ড করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ জেলার ওপর দিয়ে শৈত্য প্রবাহ বইতে শুরু করেছে। সকালে বাতাসের গতিবেগ ছিল ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার। এসব কারণে শীতের তীব্রতাও ক্রমশ বাড়ছে।
তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ নদী অববাহিকার অঞ্চল হওয়ায় কুয়াশার মাত্রাটাও একটু বেশি। আরও কয়েকদিন শৈত্য প্রবাহর পাশাপাশি কুয়াশা থাকতে পারে।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৮৩টি ইউনিয়নে ৪৯০ পিস করে কম্বল বিতরণ করেছি। আরও ২০ হাজার কম্বলের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো পেলেই শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
এমএমজেড