ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কেমন আছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নিহত হাদিসুরের পরিবার

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৩
কেমন আছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নিহত হাদিসুরের পরিবার

বরগুনা: হাদিসুর নেই। আনন্দও নেই।

বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের পরিবারে বিষাদের ছায়া। এরই মধ্যে কেটে গেছে এক বছর। তবুও এগিয়ে চলছে হাদীসুরের স্বপ্নের কুটির নির্মাণ।

গত বছর ২৪ ফ্রেরুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হলে অলভিয়া বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ২৯ জন নাবিক ও ক্রু নিয়ে সেখানেই নোঙর করা অবস্থায় আটকা পড়ে।

পরে গত বছরের ২ মার্চ ইউক্রেনে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে জাহাজে রকেট হামলা হয়। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। এ রকেট হামলার শিকার হয়ে গোলার আঘাতে নিহত হন হাদিসুর রহমান।

হাদিসুর রহমানের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। সেখানে বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় এক বোন ও ছোট দুই ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রয়েছে তার।

২০২২ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে হাদীসুর গ্রামের বাড়িতে এসে তাঁর বাড়ি নির্মাণ ও বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু আজ হাদিসুর নেই। হাদিসুরের অনুপস্থিতিতেই এগিয়ে চলছে তাঁর স্বপ্নের কুটির নির্মাণের কাজ। হাদিসুর চলে যাওয়ার এক বছর হলেও তাঁর পরিবার এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

শনিবার (৪ মার্চ) সকালে প্রিয় স্বজনকে স্মরণ করতে গিয়ে নিহত হাদিসুরের মা-বাবা দু'জনেই বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মনে হয় তাদের বেদনাকে যেন বেড়ে গেছে আরও বহুগুন। হাদিসুরকে ছাড়া যেন কোনো কিছু কল্পনা করতে পারে না তাঁরা। কারণ পরিবারের সব কিছুই ছিল তাঁকে ঘিরে।

হাদীসুরের মা রাশিদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মা তোমার মুখটা আর ছবি দেখতে ভাল লাগে। এ কথা কেউ আর এখন শোনায় না। আমারে আজ শোকের সাগরে ভাসিয়ে গেছে। হাদীসুর মারা যাওয়ার পর অনেকে খোঁজ নিলেও এখন অনেকেই তাদের পাশে নেই।

প্রকৌশলী হাদিসুরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক। শোক আর চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হাদীসুর ছাড়া আজ আমাদের জন্য সবই বিষাদ। আমাদের সবার জন্য কেনাকাটা করে এখন আর কেউ বাড়িতে পাঠায় না।

পরিবারের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও শোকাহত। তারাও যেন মেনে নিতে পারছেন না হাদীসুরকে হারানোর বেদনা। কারণ তাদের সঙ্গেও নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে।  

এমনই একজন স্কুল শিক্ষিকা শাহিদা বেগম ডলি জানান, হাদিস বাড়িতে এলে সবার সঙ্গে খাওয়া-ধাওয়া করতো। বড়দের কাছে দোয়া চাইতো ছোটদের স্নেহ করতো। এখন আর কেউ খাওয়ায় না ও দোয়া চায় না।

হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, গতবছরেও ভাই ছিল, আজ নাই। ইতোমধ্যে ভাইয়ের স্বপ্নের বাড়ি তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকে বাড়িতে এসে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে স্বপ্নের কুটির উপহার আর বিয়ে করে ঘরে বউ আনার কথা ছিল। তবে স্বপ্ন ঠিকই পূরণ হতে চলেছে। আমাদের মাঝে নেই শুধু প্রিয় ভাই। নতুন ঘরে ঠিকই যাচ্ছি। তবে কোনো আনন্দ নেই।

জানা যায়, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনের সমুদ্র বন্দরের জলসীমায় ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আটকে ছিল বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি। জাহাজটিতে সাত বছর ধরে চাকরি করতেন হাদিসুর। ২ মার্চ (বুধবার) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা ২৫ মিনিট) দিকে তাদের জাহাজে রকেট হামলা হয়। সেই সঙ্গে আটকা পড়েন জাহাজে থাকা ২৯ বাংলাদেশি নাবিক। সেই হামলায় নিহত হন জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।

**ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের দাফন সম্পন্ন
** ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলা, নিহত ১

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।