ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নারীরাই তৈরি করেন বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘চিকন সেমাই’

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০২৩
নারীরাই তৈরি করেন বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘চিকন সেমাই’

বগুড়া: বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এ সেমাইকে চিকন সেমাইও বলা হয়।

ঈদের আগে থেকেই সাদা সেমাই বানাতে ব্যস্ত সময় পার করেন কারিগররা।

জেলার সদর ও শাজাহানপুর উপজেলার প্রায় ১০টি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে সেমাই পল্লী। এসব গ্রামে অন্তত শতাধিক কারখানা রয়েছে। যেসব কারখানায় প্রায় ৭০০ কারিগর কাজ করেন। যাদের নব্বই ভাগই নারী। বাড়তি আয়ের জন্য নারীদের অনেকেই যুক্ত হয়েছেন এ পেশায়। এ কাজ করে তারা প্রতিদিন গড়ে ২০০ টাকা পান।

সোমবার বগুড়ার সেমাই পল্লীখ্যাত বেজোড়া, নিশ্চিন্তপুর, শ্যামলা কাথিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সেমাই পল্লীর কারখানাগুলো ঘুরে মালিক ও কারিগরদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য উঠে আসে।

শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের একটি গ্রাম বেজোড়া। এ গ্রাম থেকেই নাকি চিকন সাদা সেমাইয়ের জন্ম। স্বাধীনতার পর থেকেই এ গ্রামের কয়েকটি পরিবার চিকন সেমাই তৈরি শুরু করেন। তবে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানা যায়নি। সময়ের ব্যবধানে এ শিল্প বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এখানকার তৈরি চিকন সেমাইয়ের খ্যাতিও ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। সারা বছরই কমবেশি করে সেমাই তৈরি করা হয় এই গ্রামটিতে। কিন্তু প্রতি বছরই ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় রেকর্ড পরিমাণ সেমাই তৈরি করেন কারখানার মালিক-শ্রমিকরা।

সরেজমিনে দেখা য়ায়, বিদ্যুৎ চালিত সেমাই তৈরির দুই থেকে চারটি মেশিনে জন্য বোল ভর্তি ময়দা নিয়ে বসেন একজন করে শ্রমিক। আগেই প্রসেসিং করে নিয়েছেন ময়দা। সেই ময়দা মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে মেশিনের নিচ দিয়ে বেরিয়ে আসে চিকন সেমাই। পরে সেগুলো বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। ত্রিফল বা পাটের বস্তা বিছিয়ে তার ওপর শুকানো হয়। সেমাইয়ের ভাঁজে ভাঁজে বিশেষ ধরনের শলাকা ব্যবহার করে তা উল্টে পাল্টে দেওয়া হয়।

জোবায়দা বেগম, সফুরা বানুসহ একাধিক সেমাই তৈরির কারিগর বাংলানিউজকে জানান, সেমাই তৈরিতে পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারী কারিগর কাজ করে থাকেন। রমজান মাস এলে বেশির ভাগ নারী সাধারণত এ পেশায় যুক্ত হন। ঈদ এলে তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়।  

শাজাহানপুর উপজেলার বেজোরা গ্রামের সেমাই কারখানার মালিক কাফি ইসলাম, জোনায়েদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর রমজানের আগে থেকে কারখানায় প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ চলে। রমজানের ১০টি রোজা চলে গেছে। এখন সেমাই পল্লীর কারখানাগুলো আরও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ঈদ সামনে রেখে প্রত্যেক কারখানায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কেজির মতো ময়দা থেকে সাদা সেমাই তৈরি করা হয়। যার পরিমাণ প্রায় বিশ-বাইশ খাঁচি। কারখানায় প্রতি কেজি সেমাই ৪২ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়।

এ বছর বেড়েছে চাহিদা, সেই সঙ্গে সেমাই পল্লীর প্রায় প্রতিটি কারখানাতে সেমাই উৎপাদন বেড়েছে। দিনের প্রায় পুরো সময় ঘুরছে মেশিন। প্রতিবছর বগুড়ায় উৎপাদিত এ চিকন সেমাই কিনতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ উত্তরবঙ্গের রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন।  

আর দেশের প্রায় সব বাড়িতে ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয় এই সিমাই...   

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০২৩
কেইউএ/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।