বাগেরহাট: মো. কামাল হোসেন মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি উপজেলার বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী।
উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের নূর মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে কামাল হোসেন ২০১৩ সালে বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে চাকরি পান। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বর নির্বাচিত হন। তা ছাড়া সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্বও পান। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি লাইলী বেগম নামে এক নারীকে দিয়ে স্কুলে নিজের দায়িত্ব পালন করান।
দায়িত্ব অনুসারে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে একইসঙ্গে ভাতা তুলতে পারার কথা নয় কোনো দায়িত্বশীলের। কিন্তু কামাল সেটি পারেন। জানা গেছে, তথ্য গোপন করে প্রতিমাসে পরিষদের সদস্য হিসেবে সরকারি কোষাগার ৩ হাজার ৬০০ টাকা সম্মানী নিচ্ছেন কামাল। তা ছাড়া বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী হিসেবে বিদ্যালয়ে নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করেও প্রতিমাসে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন নেন।
তার নামে যে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে তার মধ্যে একটি তিনি করেন ২০০৮ সালে। এটিতে তার নাম রয়েছে মো. কামাল হোসেন। পিতা: নূর মোহাম্মাদ। জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৮৩। পরের এনআইডি করেন ২০১৩ সালে। বিশারীঘাটা স্কুলে চাকরি নিতে ১০ বছর বয়স কমিয়ে, নিজের ও বাবার নামে পরিবর্তন আনেন তিনি। নিজের নাম দেন মো. কামাল হোসেন খান। জন্ম: ১৫ জুলাই ১৯৯৪।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসের একটি সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়ার পর সেখানকার কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, কামাল হোসেনের দুটি ভোটার আইডি সচল। দুটি এনআইডিতেই জন্ম তারিখ, নিজের ও বাবার নামে কিছুটা পরিবর্তন করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে দ্রুত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব ব্যাপারে কথা হলে কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় সব তথ্য দিয়েছি। তখন তো মনোনয়ন পত্র বাতিল করেনি। আমি নিয়মিত স্কুলে চাকরি করি। পরিষদেও যাই। আমার অনুপস্থিতিতে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করেন। এতে কোনো সমস্যা তো আমি দেখি না।
বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, কামাল মাঝে মধ্যে থাকেন না। তখন তার পরিবর্তে লাইলী নামে এক নারী দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি মাসে কামালকেই নিয়মিত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়।
প্রক্সির বিষয়ে লাইলী বেগমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, মো. কামাল হোসেন একটি স্কুলে চাকরি করে তা জানি। এটায় আইনগত কোনো বাঁধা আছে কিনা আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের করণিক দিপক কুমার দেবনাথ বলেন, কামাল হোসেন ইউপি সদস্য হিসেবে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সরকারি অংশের সম্মানীর টাকা নিয়েছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মো. কামাল হোসেনের বিষয়টি জানা ছিল না। মূলত দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীদের নিয়ন্ত্রণ করেন প্রধান শিক্ষক। তাদের প্রত্যয়নেই দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীদের বেতন হয়। প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হোসেনের পক্ষে প্রতিমাসে প্রত্যয়ন দিয়েছে। কেন এই অনিয়মের বিষয় জানাননি এবং অসত্য প্রত্যয়ন দিয়েছে এজন্য প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ ইউএনও এসএম তারেক সুলতান এ ব্যাপারে বলেন, বিদ্যালয়ের দপ্তরী ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর হিসেবে দুটি পদে একই সাথে দায়িত্ব পালন ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৩
এমজে