ঢাকা, শুক্রবার, ২ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কংক্রিট ব্লক তৈরি করে পরিবেশ দূষণ রোধে ভূমিকা রাখছে মীর গ্রুপ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
কংক্রিট ব্লক তৈরি করে পরিবেশ দূষণ রোধে ভূমিকা রাখছে মীর গ্রুপ

ঢাকা: পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের ফলে প্রতিনিয়ত উষ্ণ হয়ে উঠছে বায়ুমণ্ডল। তাপমাত্রা বেড়ে পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু।

বায়ু দূষণও বাড়ছে দিন দিন। এতে পরিবেশের পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের। আর এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য অন্যতম দায়ী ইটভাটা।

দেশে বর্তমানে ৮ হাজারের বেশি ইটভাটা রয়েছে। প্রতি বছর এসব ইটভাটায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি পিস ইট পোড়ানো হয়। এর জন্য প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন কৃষি জমির মাটি। পাশাপাশি কয়লা পোড়াতে হচ্ছে ৫৬ লাখ মেট্রিক টন। এর ফলে বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে একদিকে যেমন বায়ু দূষণ হচ্ছে, তেমনি কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।

বায়ু দূষণ ও কৃষি জমির হ্রাস কমাতে নির্মাণ খাতে ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। আর এই কংক্রিটের ব্লক তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী মীর গ্রুপ।

মীর গ্রুপ ২০০৪ সালে মীর কংক্রিট প্রোডাক্টস লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের নির্মাণ খাতে নিজেদের যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৯ সালে মীর কংক্রিট ব্লক লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে পরিবেশবান্ধব কংক্রিটের ব্লক তৈরি করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ রোধে ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুরাপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা। যেখানে কাজ করে ২২০ জন কর্মী। ব্লক তৈরির দুইটি ইউনিটে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ প্রায় সাড়ে ৩১ কোটি টাকা। একটি ইউনিটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনো বাকি থাকায় এতে আরও ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বর্তমানে দুইটি ইউনিটে আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে দৈনিক এক লাখ ৬০ হাজার পিস সলিড ব্লক তৈরি করতে সক্ষম মীর কংক্রিট ব্লক লিমিটেড। ব্লকের ধরন ও আকারভেদে সেই সংখ্যা কম বেশি হতে পারে।

মীর কংক্রিট ব্লক লিমিটেড জানায়, বর্তমানে তারা ২৯ ধরনের ব্লক তৈরি করে। যার মধ্যে রয়েছে সলিড ব্লক, হোলো ব্লক, হোলো ওয়াল ব্লক, ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ ব্লক, হেক্সাগোনাল ব্লক, ড্রেন ব্লক, কার্ব স্টোন, টাইলস ইত্যাদি। চীন থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এসব ব্লক। এসব ব্লকের সক্ষমতা ইট ভাটায় কয়লা দিয়ে পোড়ানো ইটের থেকে অনেক বেশি। কোনো ধরনের পরিবেশ দূষণও হয় না। আবার নির্মাণ কাজে এসব ব্লক তৈরি করলে ক্রেতারা আর্থিকভাবেও লাভবান হবে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তারা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ভালো মানের কাঁচামাল দিয়ে এসব কংক্রিটের ব্লক তৈরি করে। ইটের তুলনায় এসব ব্লকের শক্তি, কার্যক্ষমতা ও উৎকর্ষ অনেক বেশি। এসব ব্লক লবণাক্ততা ও ভূমিকম্প সহিষ্ণু এবং পানি প্রতিরোধে সক্ষম। ভবন তৈরিতে এসব ব্লক ব্যবহার করলে সহজেই বৈদ্যুতিক লাইন ও পানির পাইপ ইনস্টল করা হয়। ল্যাবে কাঁচামাল পরীক্ষার পর এসব ব্লক তৈরি করা হয় এবং তৈরির পর চাইলে সেগুলো পরীক্ষা করারও সুবিধা রয়েছে। বুয়েটের সার্টিফিকেশন নিয়েই তারা ব্লক তৈরি করেন। ব্লক বিক্রির পরেও তারা ক্রেতাকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির কারখানা ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে বিশাল জায়গা নিয়ে দুইটি ইউনিটে ব্লক তৈরি কর্মযজ্ঞ চলছে। দেশের সুনামগঞ্জ, ছাতক, দিনাজপুর ও নেত্রকোনা থেকে এবং ভারত ও ওমান থেকে আমদানিকৃত বালি ও পাথর সড়কপথে ড্রাম ট্রাক ও নদীপথে বাল্ক হেডে করে এনে রাখা হচ্ছে কারখানায়। এসব কাঁচামাল আসার পর সেগুলো প্রথমে ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর স্টক করে রাখা বালি ও পাথর হুইল লোডার বা পে-লোডারের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে হুপারে। পরে এর সঙ্গে মেশানো হচ্ছে নিজেদের তৈরি সিমেন্ট। এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেশিনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধাপে সেগুলো অনুপাত অনুযায়ী মেশানোর পর বিভিন্ন ডাইসে হাইড্রোলিক প্রেশারের মাধ্যমে আকার দিয়ে রাখা হচ্ছে স্ট্রাইকিং জোনে। সেখানে কংক্রিটের ব্লকগুলো কিউরিংয়ের পর চলে যাচ্ছে ক্রেতার কাছে।

মীর কংক্রিট ব্লক লিমিটেডের হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বায়ু দূষণ বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। যার জন্য অন্যতম দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ। আমাদের দেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে এই বায়ু দূষণের কারণে।

বায়ু দূষণ ও কৃষি জমির কথা চিন্তা করে মীর গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি সবসময়ই চেয়েছে নির্মাণ খাতে যেন একটি উন্নতি প্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারে এবং সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে পারে। সেই উদ্দেশে নিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে মীর কংক্রিট ব্লক লিমিটেড। প্রথমে একটি ইউনিটের মাধ্যমে দৈনিক মাত্র ২০ হাজার পিস ব্লক তৈরি করলেও এখন দুইটি ইউনিটের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার পিস ব্লক তৈরির সক্ষমতায় আমরা উন্নীত হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার তাদের নির্মাণ প্রকল্পগুলোয় শতভাগ কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর কাজ করছে। আমরাও সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছি। ইতোমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প, হাতিয়ার ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রকল্প, পূর্বাচলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র ও হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালসহ বিভিন্ন প্রকল্পে আমাদের তৈরি কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে।

আলাদা আলাদা দুইটি ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কংক্রিট ব্লক নির্মাণে কিউরিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যার জন্য প্রচুর জায়গার প্রয়োজন হয়। আমাদের ইউনিট-১ এ যথেষ্ট জায়গা ছিল না। কিন্তু প্রতিনিয়ত আমাদের কংক্রিট ব্লকের চাহিদা বাড়ছিল। তাই আমরা ২৬ বিঘা জায়গায় ইউনিট-২ স্থাপন করেছি। এতে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশে ইটের বাজারের মার্কেট সাইজ ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আমরা যারা কংক্রিট ব্রিকস উৎপাদন করি তারা চাহিদার মাত্র পাঁচ শতাংশ উৎপাদন করে। তবে সামনে এর বাজার আরও বড় হতে যাচ্ছে।

ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ব্লক রাস্তায় ব্যবহার করলে প্রয়োজন অনুসারে তুলে আবার প্রতিস্থাপন করা যায়। কোথাও দুই-চারটি ব্লক ভাঙলে সেটিও প্রতিস্থাপন করা যায়। পুরোটা পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না। বাড়ি তৈরিতে ব্লক ব্যবহার করলে দেয়ালের ভেতর দিয়ে সহজে বৈদ্যুতিক লাইনসহ যেকোনো কিছু নেওয়া যায়। সাধারণ ইটের ক্ষেত্রে এসব লাইন নেওয়ার জন্য ইট ভাঙতে হয়। দেশে অনেকগুলো কংক্রিটের ব্লক তৈরির কারখানা আছে। কিন্তু ব্র্যান্ড কোম্পানি অনেক কম। আমরা চাই বড় কোম্পানিগুলো বাজারে আসুক।  

তিনি আরও বলেন, নির্মাণ কাজে ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা দরকার। আমরা ইতোমধ্যে সেই সচেতনতা তৈরির কাজ করছি। বিভিন্ন জেলায় সেমিনার করছি। সামনে আমরা বিভিন্ন জেলায় আরও সচেতনতামূলক কার্যক্রম করবো। সেখানে নির্মাণ কারিগর, ভবন মালিকদের যুক্ত করা হবে। যাতে সবার ভেতর কংক্রিট ব্লকের সচেতনতা ছড়িয়ে যায়।

২০২৫ সালের মধ্যে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমাতে আমরা পরিবেশ বান্ধব নির্মাণ সামগ্রী তৈরি করছি। সবাই কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারে আগ্রহী হলে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সহজতর হবে।

আগামীতে দেশের চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারেও কংক্রিটের ব্লক রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে মীর কংক্রিট ব্লক লিমিটেডের।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসসি/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।