ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঋণ নিতে খালি চেকের পাতা ও স্ট্যাম্প দিয়ে হয়রানির শিকার গ্রাহকরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৩
ঋণ নিতে খালি চেকের পাতা ও স্ট্যাম্প দিয়ে হয়রানির শিকার গ্রাহকরা

পটুয়াখালী: ঋণ দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির প্রতিবাদে প্রশাসনের সহায়তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের একাধিক ভূক্তভোগী।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট)  দুপুরে পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমনই অভিযোগ করেন ভূক্তভোগীরা।

মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আল আমিনের বিরুদ্ধে ঋণ দেয়ার আগে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প গচ্ছিত রাখা এবং পরে তা ফেরত না দিয়ে হয়রানির একাধিক অভিযোগ করেন তারা।  

এসময় মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব, ভূক্তভোগী গ্রাহক নাসির সিকদার ও বাদল সিকদারসহ বিভিন্ন পরিবারের নারী সদস্যরাসহ পটুয়াখালী জেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

তারা বলেন, গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার নামে ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প নেয় আল আমিন। পরে ঋণ পরিশোধ করা হলেও, তা ফেরত না দিয়ে, সেই ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে মিথ্যা মামলা দিয়ে কয়েকটি পরিবারকে ঘর বাড়ি ও এলাকা ছাড়া করেছে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ, নিয়ম বর্হিভূত ঋণ বিতরণ ও আদায়ে উচ্চ সুদ গ্রহণ ও সাধারণ গ্রাহকদের হয়রানি এবং মিথ্যা মামলার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান ভুক্তভোগী পরিবার।

তাদের অভিযোগ সমিতির সভাপতি আল-আমীন সমবায় নীতিনালা না মেনে সমিতি পরিচালনা করছে। ব্ল্যাঙ্ক চেক ও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নীতিমালা বর্হিভূত ঋণ বিতরণ করেন। যার নিবন্ধন নম্বর-৯০/পিডি।

১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব বলেন, আল আমিন ইউপি সদস্য। সে কাউকে সম্মান করে না। হঠাৎ টাকার গরম হয়েছে। এক প্রতিবন্ধী তার সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মারা গেছে। তারপরও সে তা মাফ করেনি। উল্টো তার ছেলেকে চাপ দিয়ে জায়গা জমি ও বউয়ের সোনার গহনা বিক্রি করে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েও ক্ষমা পায়নি। আরও এক লক্ষ টাকা দাবি করে।

ভূক্তভোগি বাদল সিকদার জানান, আমি মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেডের একজন সদস্য। আমার টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সমিতির কাছ থেকে ছয় লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। এই ঋণ নিতে সমিতির সভাপতি আল আমিন আমার কাছ থেকে স্বাক্ষরিত তিনটি ব্ল্যাঙ্ক চেক ও তিনটি স্ট্যাম্প গচ্ছিত রাখে এবং বলে ঋণ পরিশোধ হলে চেক এবং স্ট্যাম্প দিয়ে দেবে। আমি প্রতি মাসে বার হাজার টাকা করে দিয়ে সুদ সমেত ১৪ মাসে ঋণের টাকা পরিশোধ করে দেই। ঋণ পরিশোধ হওয়ার পরে সমিতির কাছে গচ্ছিত রাখা আমার ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প দেব দেব বলে ফেরত দেয়নি আল আমিন। পরে আমার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য আল আমিন তার ভায়রা বেল্লালকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার করে বিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। টাকা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করিয়েছে। এখন আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

আরেক ভূক্তভোগী নাসির জানান, সে সমিতির একজন সদস্য। সমিতির কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন তিনি এবং গ্রান্টর হিসেবে তার সই করা তিনিটি খালি স্ট্যাম্প ও আমার ছেলে কাওসারের সই করা জনতা ব্যাকের তিন পাতা চেক দেয় সমিতির সভাপতি আল আমিনের কাছে। ঋণ পারিশোধের কার্যক্রম চলমান অবস্থায় আমার ছেলের সঙ্গে আল আমিনের দ্বন্দ হওয়ায়, আল আমিন তার শাশুড়িকে দিয়ে সমিতিতে গচ্ছিত স্ট্যাম্পে  জমি বিক্রির টাকা নেওয়ার কথা বলে একটি মামলা দায়ের করান। সেই চেক ডিজ অনার করিয়ে আমার ছেলের নামে মামলা করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

শ্যামল চন্দ্র নামে একজন ভূক্তভোগী বলেন, আমিও ঋণ নিতে স্ট্যাপ দিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মামলা করে ওয়ারেন্ট করিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে এই আলামিন। সমিতি থেকে লোন গ্রহিতা মামুন জানান, আমি মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেডের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছি। আমিও সমিতির কাছে তিনটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছি। কিন্তু এখন আমার ভয় করছে আমার নামে আবার মামলা দিয়ে দেয় কিনা।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আল আমিন জানায়, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভুয়া। আমার সমিতিতে চাকরি করতো, সমিতির টাকা তসরুপ করে ধরা পরার পরে চেক দিয়েছেন। সে চেক ডিজঅর্নার হয়ে মামলা হয়েছে। সেজন্য ক্ষিপ্ত হয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করছেন।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম এর কাছে মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেড বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানান, এই সমতির সভাপতি আল আমিনের বিরুদ্ধে চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে জালিয়াতি করার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা সমবায় কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার চন্দ এর সাথে কথা বললে তিনি জানান প্রতিটি সমিতিরই নিয়ম কানুন আছে। সমিতির সদস্যদের জমা টাকার আশি পারসেন্ট পরিমান টাকা লোন গ্রহণ করতে পারবে। কোন সমিতি যদি অনিয়ম করে তাহলে তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মির্জাগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেড যদি কোন অনিয়ম করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ইতিমধ্যে রয়েছে ১৫৯টি সমবায় সমিতি। ২ নং মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ানে রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি সমিতি এ সকল সমিতি গ্রামের দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের ঠকিয়ে কিছু কিছু লোক আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২১ 

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।