ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, চালের সঙ্গে অর্থ সহায়তা চান জেলেরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান, চালের সঙ্গে অর্থ সহায়তা চান জেলেরা

পটুয়াখালী: প্রজননক্ষম মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান -২০২৩ ও ইলিশের নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র সৃষ্টিতে দেশের নদনদীতে মাছ শিকারে ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ সময় মাছ ধরতে না পেরে, বেকার হয়ে পড়েছেন পটুয়াখালীর দেড় লাখ জেলে।

এ পেশায় নির্ভরশীল জেলেরা সংসারের খরচ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।  

এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার চাল দিলেও নিবন্ধনহীন পেশাগত জেলেরা পাচ্ছেন না সরকারি কোনো সহায়তা।

এদিকে নিবন্ধিত জেলেরাও সময় মতো চাল না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। চালের সঙ্গে নগদ অর্থ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন জেলে পরিবার। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে চালের পরিমাণ পূর্বে থেকে বৃদ্ধি করে দ্রুত বিতরণ এবং আরও জেলে নিবন্ধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে প্রতি বছরই মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান পরিচালনা করে মৎস্য বিভাগ। গত ১২ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২২ দিন চলবে এ অভিযান।  

এদিকে এই অভিযান ঘিরে সকল নদী ও সমুদ্রে বন্ধ সব ধরনের মাছ শিকার। যার কারণে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়বেন উপকূলের জেলেরা। বেকার সময়গুলোতে কীভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাবেন তা নিয়ে চিন্তিত জেলেরা। দ্রুত সরকারি সহায়তার চাল বিতরণসহ ভবিষ্যতে চালের সঙ্গে নগদ অর্থের দাবিও জানান তারা।

রাঙ্গাবালীর ছোট বাইশদিয়া এলাকার জেলে হারুন চৌকিদার (৬০) বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই জেলে কাজ করি। আমার ছেলেরাও জেলের কাজ করে। আমার জেলে কার্ড আছে কিন্তু আমাকে চাল দেয় নাই। আমার ছেলে সন্তানসহ সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। কার্ড দেখে চাল দেয় নাই । দিয়েছে স্লিপ দিয়ে। তাতে গাড়ি ওয়ালারাও চাল পেয়েছে। মেম্বার আমাদের চাল দেয় নাই।  

ছোট বাইশদিয়া এলাকার জেলে মামুন হাওলাদার (৪০) বলেন, আমি চাল ২০ কেজি পেয়েছি। এতে এই ২২ দিন কিছুই হবে না আমাদের। তারপরও যতটুকু পেয়েছি কিন্তু এবার নদীতে মাছ নাই। খুবই অভাবের সংসার। এই চাল দিয়ে ভাত রান্না করে খাওয়ার জন্য সবজি কেনাই দায়। সরকার যদি চালের সঙ্গে কিছু আর্থিক সহায়তা করতো তাহলে ভালো হতো।  

কোড়ালীয়া লঞ্চঘাট এলাকার জেলে সোহেল মিয়া (৩০) বলেন, আমরা এই জেলে কাজ করি। ছোট বেলা থেকেই। কিন্তু আমাদের জেলে কার্ড দেয় না। দেয় যারা গাড়ি চালায়, কৃষিকাজ করে তাদের। এই অবরোধে কার্ড যাদের আছে কমবেশি চাল পায় । আমরা তো না খেয়ে মরার অবস্থা।  

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, এই ২২ দিনে যাতে জেলেদের কষ্ট না হয় সে লক্ষ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। খাদ্য সহায়তা হিসেবে কার্ডধারী জেলেদের এবার আরও পাঁচ কেজি বাড়িয়ে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।  

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, নিবন্ধনের বাহিরে থাকা জেলেদের নতুন করে নিবন্ধিত করাসহ সরকারি সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের সক্ষমতা অনুযায়ী আস্তে আস্তে সহায়তার পরিমাণ বাড়ছে এবং জেলেদের বাড়তি আয়ের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও কাজ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম জানান, কর্মসূচি সফল করতে জেলা টাস্ক ফোর্স কমিটি বিস্তর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে। অভিযান পরিচালনাসহ চেকপোস্ট ও টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ এলাকায় নিয়োজিত করা হয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জেলেদের সহায়তার চাল দ্রুত বিতরণের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৮৫ হাজার। তবে এর বাইরেও এ জেলার অর্ধ লাখ জেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু নিবন্ধন তালিকায় নাম না থাকায় সরকারের সকল সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন এসব জেলেরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।