বরিশাল: প্রধান প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় বরিশালের হিজলায় অভিযানিক দলের ওপর জেলেদের হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তবে হামলায় কেউ গুরুতর আহত হয়নি বলে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে জানিয়েছেন হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে হিজলা উপজেলাধীন গৌরনদী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর জানপুর ও খালিশপুর অংশে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এম এম পারভেজ বলেন, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে ইলিশ শিকার করছিলেন জেলেরা। বিষয়টি জানতে পেরে খালিশপুরের অংশে অভিযানে গেলে আকস্মিক অভিযানিক দলের ওপর হামলা চালায় তারা। এ সময় তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার পাশাপাশি নৌকায় থাকা লাঠির মাথায় মশালের মতো জিনিস আমাদের বোটকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে। যার মধ্যে আমাদের মাঝি-শ্রমিকসহ কয়েকজন জেলেদের হামলায় আহত হয়েছেন।
অভিযানে নৌ পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত অভিযানিক দলের তাড়া খেয়ে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার রেখে পালিয়ে যান।
এদিকে হিজলা নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, জেলেরা অভিযানিক দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলেও ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় অভিযানিক দলে থাকা নৌ পুলিশের কেউ আহত হয়নি।
এদিকে ওইদিন মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়ে আটক ১২ জেলের নামে নিয়মিত মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছেন হিজলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ।
উল্লেখ্য, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বরিশাল সদরের কীর্তনখোলা, হিজলা উপজেলাধীন মেঘনা, গৌরনদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন আড়িয়াল খাঁ, বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলাধীন সন্ধ্যা, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন তেঁতুলিয়া ও কালাবদর, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলাধীন সুগন্ধা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অসাধু জেলেরা মাছ শিকার করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে হিজলার গৌরবদী ইউনিয়নের জানপুর, খালিশপুরের মেঘনা নদীর অংশে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের জড়িত থাকার কথা বলছে মৎস্য বিভাগ। আর এ কারণে প্রায় প্রতিবছর হিজলাতে নিষেধাজ্ঞার সময় অভিযানিক দলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া কীর্তনখোলা ও কালাবদর নদীতে মৎস্য বিভাগের এক কর্মকর্তার নির্দিষ্ট মাঝি ও সোর্সদের ম্যানেজ করে মাছ শিকার করছেন অসাধুরা। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে হামলার শিকার না হলেও পুলিশ ও সাংবাদিকদের হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। মিথ্যে মাছ লুটের অভিযোগও তোলা হয় তাদের নামে।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর রাতে মুলাদীতে অভিযান দলের ওপর অসাধু জেলেরা টেঁটা হামলা চালায়। পরে ১৯ অক্টোবর প্রশাসনের সমন্বিত বাহিনী মৃধারহাট, ভেদুরিয়া, আবুপুর, গোসাইরহাট উপজেলার মধ্যপয়েন্ট এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের বহর দেখেই জেলেরা পালিয়ে যান।
গত ১৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় তেঁতুলিয়া নদীতে অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয় অভিযানিক দল। ওই সময় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জেলে একত্রিত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে অভিযানিক দল তথা ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিমের ওপর হামলা চালায়। পরে জব্দ করা ১২টি নৌকা আর ১০ হাজার মিটার জাল ছিনিয়ে নেন হামলাকারীরা। এ ঘটনায় ওইদিনই থানায় দেড়শ জনের নামে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া একইদিন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীতে অভিযানে গিয়ে জেলেদের হামলায় অতুল জোয়াদ্দার নামে এক মৎস্য কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। সে ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
এমএস/আরবি