ঢাকা: যেকোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় কোনো ধরনের হামলার শিকার হলে সেই দলকেই এর দায় ভার নিতে হবে। একই সঙ্গে আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবেই ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের নেতারা। আন্দোলনের নামে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপির হামলা, জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশ হত্যা এবং ফিলিস্তিনে ইসরায়েল-মার্কিনি বর্বরতায় নারী, শিশু, সাংবাদিকসহ গণহত্যার প্রতিবাদে সভাটির আয়োজন করা হয়।
সভায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বিএনপি-জামায়াত জন্মগতভাবে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তাদের শাসনামলে (২০০১-০৫) সাংবাদিক হত্যা এবং হামলার পরিসংখ্যান অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা তুলে ধরেছিল। ২৮ অক্টোবর প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ না হলে এমন হামলার ঘটনা থামানো সম্ভব না।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা এ সমাজের সবচেয়ে নিগৃহীত মানুষ। তাদের ওপর হামলা এমনকি সাংবাদিক হত্যার বিচারের নজির এদেশে খুব কম। স্বাধীন বাংলাদেশ মাত্র দুজন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বার বার সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের স্থায়ী বিচারিক সমাধান করতে হবে।
বুলবুল আরও বলেন, পশ্চিমা শক্তি বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের কথা বলছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনের খবর প্রকাশ করায় আল জাজিরা বন্ধের চেষ্টা করছে। এর আগে ফিলিস্তিনে এএফপির অফিস বোমা মেরে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব নারকীয় ঘটনা আমরা টেলিভিশনে দেখেছি। আমরা গৌরববোধ করি আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়ানো সকল সাংবাদিকদের দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক চক্র বাংলাদেশের নির্বাচন বন্ধ করার পায়তারা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্যে দুইদলকে সরিয়ে দেশের রাজনীতি ধ্বংস করা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ২৮ অক্টোবরের হামলা এবং ফিলিস্তিনের হামলার মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনের হাসপাতালে হামলা করে, বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে হাসপাতালে হামলা হয়। ইসরায়েলের ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে, ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ৩২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাই নীরব, বিদেশি দূতাবাসগুলো নীরব। সাংবাদিকদের ওপর বর্বর হামলা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। পশ্চিমা শক্তিগুলো গণতন্ত্রকে নিজেদের সুবিধার্থে নিজেদের মতো ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল আন্দোলন করবে এটা স্বাভাবিক, গণমাধ্যম সেখানে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার পেছনে দুরভিসন্ধি রয়েছে। এটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। আমরা ৭৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে, ৭২ ঘণ্টা শেষ হলে আমরা লাগাতার কর্মসূচি দেব। আমরা সাংবাদিক, সত্য প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের ওপর যখন হামলা হবে, বুঝতে হবে হামলাকারীদের দুরভিসন্ধি হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে একজন প্রবীণ সাংবাদিক রফিক ভূইয়া মারা গেছেন। প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক মারাত্মক জখমের শিকার হয়েছেন, এগুলো সবই পরিকল্পিত হামলা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে, হাসপাতালে আগুন দেওয়া হয়েছে, এগুলো খুবই বর্বর ঘটনা। এমন আগ্রাসী মনোভাব যেন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের আগ্রাসনের প্রতিফলন। আন্দোলনের নামে বিএনপি দেশে ফিলিস্তিনের মতো পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র চাই, এমন আগ্রাসন চাই না।
দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক বলেন, ২৮ অক্টোবর আন্দোলনের নামে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করছে, হাসপাতালে আগুন দিয়েছে এবং একজন পুলিশকে হত্যা করেছে। যে সাংবাদিক সমাজ সব আন্দোলন সংগ্রামের খবর প্রকাশ করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে এমন বর্বরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ফিলিস্তিনে কিংবা বাংলাদেশের রাজপথে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক হত্যা ও হামলার ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই।
২৮ অক্টোবর বিএনপির এক দফা কর্মসূচির সমাবেশে দায়িত্ব পালনকালে আহত দুই সাংবাদিক সমাবেশে বক্তব্য দেন। তারা হলেন সংবাদ সংস্থা ফোকাস বাংলার জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী মোস্তাফা কামাল এবং ডিজিটাল খবরের আলোকচিত্রী মেহেদী হাসান।
জাস্টিস ফর জার্নালিস্টের কো চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল চৌধুরী, সাংবাদিক শেখ মামুন হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ, ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম, জাস্টিস ফর জার্নালিজমের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৩
ইএসএস/এমজে