ঢাকা: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে সাবেক গার্মেন্টসকর্মীর নেতৃত্বে একটি চক্র এটিএম কার্ডের প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে আসছিল।
বুথে টাকা তুলতে আসা বৃদ্ধদের টার্গেট করা হতো এবং যেসব বুথে নিরাপত্তা কর্মীরা অন্যমনস্ক তাদের টার্গেট করা হতো।
শাহবাগ থানায় এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের মূলহোতা শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ (৩৩) ও তার সহযোগী মামুন মাতব্বর। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) নিজ কার্যালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আতাউর রহমান নামের এক ভুক্তভোগী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার স্ত্রীর টিউমার অপারেশনের জন্য আসেন। গত ১৪ অক্টোবর দুপুর সোয়া ২টার দিকে স্ত্রীর চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যাংকের পাশে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে যান। এটিএম বুথে গিয়ে দেখেন ভেতরে আগে থেকে এক ব্যক্তি অবস্থান করছেন।
ভুক্তভোগী টাকা তোলার চেষ্টা করলেও মেশিনে কার্ড না ঢোকায় সাহায্যের কথা বলে কৌশলে এটিএম কার্ডটি সরিয়ে নিজের পকেট থেকে আরেকটি কার্ড দেন। কার্ড পরিবর্তন করে গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ একই রকম অন্য একটি কার্ড ভুক্তভোগীকে দিয়ে দ্রুত বুথ ত্যাগ করেন।
ভুক্তভোগীকে দেওয়া এটিএম কার্ডটি মেশিনে প্রবেশ করালে কার্ডটি আটকে যায়। নিজে টাকা তুলতে ব্যর্থ হলেও মোবাইল ফোনে আসা মেসেজে আতাউর দেখেন তার কার্ড দিয়ে পাঁচবারে এক লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। ঘটনার পর ভুক্তভোগী বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করেন। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্ত করেন এবং ব্যাংকের সহায়তায় নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় অভিযোগ দেন।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে ডিবি সন্ধান পায় অভিনব কৌশলে এটিএম কার্ড বদল করা একটি চক্রের। পরে রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শহিদ ও তার সহযোগী প্রতারণা বিষয়ে জানান, তারা ২০১৫ সাল থেকে কার্ড বদল করে প্রতারণা করে আসছিলেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা তুলতে আসা বৃদ্ধদের টার্গেট করতেন তারা।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারণার কৌশল হিসেবে টার্গেট নির্ধারণ করার পর টাকা উত্তোলনের বাহানা করে এটিএম বুথের ভেতরে অবস্থান নেন শহিদ। বাইরে তার সহকারী মামুন টার্গেটের ওপর নজর রাখেন। শহিদ দুটি ভিন্ন রংয়ের এটিএম কার্ড পকেটে রাখেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা তুলতে আসা টার্গেট বৃদ্ধ ব্যক্তিরা বুথে প্রবেশ করার আগে বিভিন্ন বাটন চেপে এটিএম বুথের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা তোলার অপশন চালু করে রাখেন শহিদ।
ফলে গ্রাহক যখন কার্ড প্রবেশ করানোর চেষ্টা করে তখন মেশিন কার্ড নেয় না। পাশাপাশি কয়েক সেকেন্ডের জন্য কার্ড দিয়ে টাকা তোলা বন্ধ থাকে। সেই সুযোগে সাহায্য করার অজুহাতে শহিদ এগিয়ে এসে কার্ড প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কার্ড চেয়ে নেন। তখন গ্রাহকরা সরল বিশ্বাসে তাকে কার্ড দিলে সেই কার্ডের সঙ্গে মিল রেখে কৌশলে সেটি বদলে দেন।
বদলে ফেলা অন্য এটিএম কার্ড মেশিনে প্রবেশ করিয়ে পিন চাপতে বলে পেছন থেকে দেখে নেন। এরপর দ্রুত বুথ থেকে বের হয়ে অন্য বুথে গিয়ে টাকা তুলে নেন শহিদ।
শহিদুল গোয়েন্দা পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পরে প্রতারণার কৌশল বের করেন। তখন গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে এটিএম কার্ড প্রতারণা শুরু হয় তার। মামুন তার একমাত্র সহযোগী। ঢাকায় তার কোনো বাসা নেই। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিয়ে প্রতারণা করতেন তিনি।
প্রতি মাসে ৫/৬টি প্রতারণা করতেন। টাকা পেলে গোপালগঞ্জে নিজ বাড়িতে চলে যেতেন। আয়ের টাকা দিয়ে মাদক সেবন ও পরিবারের খরচ বহন করেন মামুন। গ্রেপ্তার শহিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় চারটি মামলা রয়েছে। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করার তথ্য পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
পিএম/এসআইএ