ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৩ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু

খুলনা: সুন্দরবনে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘রাস উৎসব’। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবে ইতোমধ্যেই মুখরিত হয়ে উঠেছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোল।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া উৎসব মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) পূজা অর্চনা ও পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে নদীপথে নিরাপদ যাতায়াতে ও হরিণ শিকার বন্ধে বনরক্ষীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মো. নূরুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাস উৎসবে যোগ দিতে পারছেন। জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সুন্দরবনে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে। প্রতিটি চেকিং পয়েন্টে বন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টিম গঠন করে টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

রাস উৎসবের ইতিহাস:
দুবলার চরের রাস উৎসব প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে নানা মত প্রচলিত আছে। জানা গেছে, ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসারী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু মেলার শুরু করেছিলেন ১৯২৩ সালে। এই সাধু চব্বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনে গাছের ফল-মূল খেয়ে জীবন ধারণ করেছেন।

আবার কারও কারও মতে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন। এটিকে স্মরণ করেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব। অনেকে এটাও মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ কোনো এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। তার স্বপ্নাদেশকে সম্মান জানাতে বসে রাসমেলা।

কী হয় রাস উৎসবে:
আগে দুবলার রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশ থেকে প্রচুর পুণ্যার্থী ও পর্যটকের সমাগম ঘটতো। প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ প্রতি বছর এ উৎসবে যোগ দিতেন। যদিও বর্তমানে পুণ্যার্থী ছাড়া অন্যদের রাস উৎসবের সময় সুন্দরবনে ভ্রমণের অনুমতি দিচ্ছে না বন বিভাগ।

রাস উৎসবে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন পুণ্যার্থীরা। তারা সাগরকে সামনে নিয়ে নির্জনে কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতা নীলকমল আর গঙ্গাদেবীর আরাধনায় মগ্ন হন। পাপমোচন করেন সমুদ্রস্নানে। সূর্যোদয়ে পানিতে ভাসিয়ে দেন ফল-ফুল। এরপর ঢাক-ঢোলক-কাসা-মন্দিরা বাজিয়ে ভজন-কীর্তন নিনাদিত করেন চারপাশ। পূজা-অর্চনার ফাঁকে সূর্যাস্তের পর সাগরকে সাক্ষী রেখে আকাশের বুকে উড়িয়ে দেওয়া হয় ফানুস।

সন্তানহীন ধর্মনুরাগী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দুবলার রাস উৎসবের সময়ে মানত করেন এবং মেলায় এসে মানতকারীরা আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করে থাকেন। মেলায় বাদ্য, নৃত্য, গীত ও বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কুটির শিল্পের দোকান ছাড়াও পসার সাজিয়ে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ফল-ফলাদি, মিষ্টান্ন, মনোহারী সামগ্রীর দোকান।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
এমআরএম/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।