ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মুসাফিরের মৃত্যু: ডা. শরীফের অবহেলা তদন্তে কমিটি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
মুসাফিরের মৃত্যু: ডা. শরীফের অবহেলা তদন্তে কমিটি

শরীয়তপুর: শিশু মুসাফিরের মৃত্যুর পর শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ উর রহমানের অবহেলার সংশ্লিষ্টতা খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ৮টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মুসাফিরের মৃত্যু হয়। তার পরিবারের দাবি, ডা. শরীফ উর রহমানের অবহেলার কারণেই মুসাফিরের মৃত্যু হয়েছে।

শিশু মুসাফির শরীয়তপুর পৌরসভার চরপালং গ্রামের রাজিব শেখ ও রুবিনা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে।

ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইনি বিশেষজ্ঞ হোসনে আরাকে প্রধান করে সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক্স) আতিকুর রহমান ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মিতু আক্তারকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসক শরীফ উর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মুসাফিরের স্বজন ও হাসপাতালের নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঠাণ্ডা ও পেটের সমস্যা নিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই মুসাফির অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার স্বজনরা নার্সকে ডাকতে তাদের কক্ষে যায়। কিন্তু সেখান থেকে আয়া পাঠানো হয়। তিনি এসে মুসাফিরকে অক্সিজেন দেন।

আয়া কেন অক্সিজেন দেবে জানতে চাইলে রুবিনা বেগমের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। এ সময় সেখানে নার্স সীমা বৈদ্য আসেন। তিনি মুসাফিরকে দেখে ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক স্বজনরা দায়িত্বরত চিকিৎসক শরীফ উর রহমানকে একাধিকবার খবর দেন। কিন্তু তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেননি। পরে নার্স সীমা বৈদ্য ওয়ার্ড বয় ও আয়ার মাধ্যমে তাকে ডেকে পাঠান। তারপরও তিনি আসেননি। পরে ওই নার্স নিজে গিয়ে ডাক্তারকে ডাকতে যান।

এ সময় শরীফ উর রহমান তাকে বলেন, ‘শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে আমার কাছে নিয়ে আসো। ’ রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়ে গেছে জানিয়ে নার্স অক্সিজেন মাস্ক খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তারপরও শিশু মুসাফিরকে শেষ পর্যন্ত দেখতে যাননি শরীফ উর রহমান। এ সময়ের মধ্যে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে মুসাফির।

ছেলে হারিয়ে রুবিনা বাকরুদ্ধ। তারপরও সাংবাদিক এসেছে শুনে তিনি কথা বলতে আসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অনেকবার বলার পরেও ডাক্তার স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে যায় নাই। এরপর আমার বাবুর অবস্থা খারাপ হলে আমি কয়েকবার ডাক্তারের কাছে যাই। তিনি আমাকে একটা ওষুধ লিখে দেন। সেটি খাওয়ানোর পর মুসাফির আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর আমি নার্সকে খবর দিই। তিনি প্রথমে আয়াকে পাঠান। তিনি অক্সিজেন মাস্ক পরানোর সময় আমি প্রশ্ন করি, কেন তিনিই মাস্ক পরাবেন? নার্স কোথায়? এ কারণে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়।

রুবিনা আরও বলেন, আয়া অক্সিজেন মাস্ক পরানোর পর আমি কয়েকবার নার্সকে ডাকতে যাই। পরে তিনি আসেন। তিনিই আমাকে ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেন। আমি কয়েকবার ডাক্তারকে ডাকি। তিনি আসেননি। পরে নার্স নিজেই ডাক্তার ডাকতে যান। তার কথা শুনেও ডাক্তার আসেননি। আমার নাড়ি ছেঁড়া ধন এর মধ্যেই চলে গেছে।

রাজিব শেখ বলেন, ডাক্তারকে আমি একাধিকবার ডাকলেও তিনি আমার কথায় গুরুত্ব দেননি। আমার বাচ্চা মারা গেছে। ডাক্তার এলে আমার বাচ্চা মরত না। সদর হাসপাতাল রোগী মেরে ফেলে। আমি চাই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যেন আর কোনো বাবা সন্তান হারা না হয়।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য বলেন, আমি দেখলাম বাচ্চার পেট ফুলে গেছে। রোগীর স্বজনদের ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দিয়েছিলাম। স্বজনদের ডাকে ডাক্তার সাড়া না দেওয়ায় আমি ওয়ার্ড বয়কে দুইবার পাঠিয়েছিলাম, এরপরও ডাক্তার আসেননি। এরপর আমি আয়াকে পাঠিয়েছি, ডাক্তার আয়াকে বলেছিলেন অক্সিজেন খুলে তার কাছে নিয়ে যেতে। বাচ্চার অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমি অক্সিজেন খুলতে রাজি হইনি। এরপর আমি নিজেই ডাক্তার ডাকতে যাওয়ার পর তিনি আমাকেও একই কথা বলেন। এরপর শুনেছি বাচ্চার স্বজনরা কান্না করছেন। ততক্ষণে শরীফ স্যারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়, এরপর অন্য ডাক্তার এলে তিনি এসে দেখেছেন বাচ্চাটি মারা গেছে। ডাক্তার শরীফ উর রহমান এলে হয়ত কোনো ওষুধ দেওয়া যেত। শিশুটি হয়ত বেঁচে থাকতো।

হাসপাতালের থাকা অপর রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, যারা ঝাড়ু দেয়, ময়লা পরিষ্কার করে তাদের দিয়ে ইনজেকশন, স্যালাইন ও অক্সিজেন দেওয়ানো হয়। যদি আয়ারাই এসব করবে তাহলে হাসপাতালে নার্স ও চিকিৎসক আছে কী করতে? এমন করলে তো আমরা গরিব মানুষ চিকিৎসা পাব না। টাকা নেই বলেই তো আমরা সরকারি হাসপাতালে আসি। ডাকার পরেও আজ ডাক্তার না আসায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। এ দায়ভার সম্পূর্ণ সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শরীফ উর রহমানের।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সিভিল সার্জন ডা. আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, শিশু মৃত্যুর বিষয়টি শুনে আমি হাসপাতালে গিয়েছি। যদি চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যু হয়, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।