ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে গুজব ছড়িয়ে হত্যা: ছড়ানো ভিডিওতে যাদের দেখা গেল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৪
ফরিদপুরে গুজব ছড়িয়ে হত্যা: ছড়ানো ভিডিওতে যাদের দেখা গেল ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লিতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে দুই কিশোর নির্মাণশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা ও কয়েকজনকে আহত করার মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। ভিডিও ক্লিপে হত্যাকাণ্ডে কারা অংশ নিয়েছে সেটাও দেখা গেছে।

রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পঞ্চপল্লি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের বাইরে উন্মত্ত জনতার চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। ভেতরে আরেকদল লোক নির্মমভাবে শ্রমিকদের পেটাচ্ছে ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করছে। বেদম পিটুনিতে চিৎকার করে আহাজারি করতে থাকেন শ্রমিকরা।  

ভিডিওতে নির্যাতনে অংশ নিতে দেখা গেছে ওই গ্রামের উজ্জ্বল, সুফল, সুকুমার, রাজকুমার, সাধন, বিকাশ, সুজিত, মানিকসহ আরও কয়েকজনকে।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সেখানে নির্মাণশ্রমিকদের পিঠমোড়া করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে সেখানে ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) অজিৎ কুমার সরকারকেও দেখা যায়।  

যদিও ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান তপন মোবাইল ফোনে কল করে বিষয়টি মধুখালী থানা পুলিশকে জানান।

গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধুখালীর ডুমাইনের পঞ্চপল্লিতে কালি মন্দিরে আগুন দেওয়ার সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে বাঁশ, লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে দুই কিশোর সহোদর আশরাফুল খান (১৭) ও আরশাদুল খানকে (১৫) হত্যা করা হয়। গুরুতর জখম করা হয় আরও পাঁচজনকে।

সেদিন প্রথমে খবর পেয়ে মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ননী গোপাল ও একজন কনস্টেবল আসেন ঘটনাস্থলে। হামলাকারীরা দুই পুলিশকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফিরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরেই মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনূন আহমেদ অনীক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন ঘটনাস্থলে যান। ইউএনও এবং ওসিকে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা সেখানে অবরুদ্ধ করে রাখে হামলাকারীরা।  

এরপর ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব গিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৭৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পুলিশ।  

ওই ঘটনার পর মন্দিরে আগুন, নির্মাণ শ্রমিক হত্যা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে তিনটি মামলা হয়েছে স্থানীয় থানায়। এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কয়েকজনকে আটক করেছে। তবে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আটকদের নাম-পরিচয় জানায়নি।

ঘটনার দুদিন পর ২০ এপ্রিল ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেন এবং পঞ্চপল্লিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির তদন্ত চলমান রয়েছে।

ছড়ানো ভিডিওর ব্যাপারে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা কিছু বলতে রাজি হননি। ঘটনার তদন্তে ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।