দিনাজপুর: বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি চালের পাশাপাশি সুস্বাদু লিচুর জন্য দেশজুড়ে আলাদা পরিচিতি আছে দিনাজপুর জেলার। এ জেলার উৎপাদিত লিচু সারা দেশেই বাজারজাত করা হয়।
অপেক্ষার পরে স্থানীয় বাজারে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন জাতের লিচু। তবে গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর দাম অনেকটাই বেশি বলে জানান ক্রেতারা। বৈরী আবহাওয়ায় ফলন বিপর্যয় আর সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
শনিবার (০২ জুন) দিনাজপুরের সর্ববৃহৎ ফলের আড়ত কালিতলা নিউমার্কেটে গিয়ে বিভিন্ন জাতের লিচু বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আকারভেদে মাদ্রাজি জাতের প্রতি হাজার লিচু তিন হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকা, বোম্বাই লিচু তিন হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা, বেদানা লিচু পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সাত হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর চায়না-৩ জাতের লিচু আকার ভেদে ছয় হাজার ৫০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা দরে প্রতি হাজার পিচ বিক্রি হচ্ছে।
কালিতলা নিউমার্কেটে লিচু কিনতে আসা দিলারা বেগম বলেন, দাম বেশি হওয়ায় দিনাজপুরে থেকেও লিচু কেনা কষ্টকর হয়ে গেছে। গত বছর প্রতি হাজার মাদ্রাজি লিচু দুই হাজার টাকার মধ্যে দাম থাকলেও এবার দাম তিন হাজার টাকার ওপরে। আর বোম্বাই লিচু আড়াই হাজার টাকার মধ্যে থাকলেও এবার সাড়ে তিন হাজার টাকা দাম চাচ্ছে। মনে করছিলাম পরিবারের জন্য ৫০০ লিচু নেব। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় ৩০০ লিচু কিনলাম।
শহরের সুইহারী থেকে লিচু কিনতে আসা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, লিচুর আকার গতবারের চেয়ে এবার ছোট। কিন্তু তারপরেও দাম বেশি। এখন সবে মাত্র উঠতে শুরু করেছে, তাই দাম বেশি চাচ্ছে। পরিবারের জন্য সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দরে ২০০ পিস বেদানা লিচু কিনেছি। বাইরের আত্মীয়-স্বজনদেরও লিচু পাঠাতে হয়। কিন্তু এবার যে দাম তাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে লিচু কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।
নিউমার্কেটের লিচু বিক্রেতা আঙ্গুর ইসলাম বলেন, এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে। বাগান থেকেই আমাদের বেশি দামে লিচু কিনতে হচ্ছে। পরিবহন খরচ বাদে সীমিত লাভ রেখে বিক্রি করছি। চাহিদার তুলনায় বাজারে লিচু সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা আছে।
দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক এজামুল হক বলেন, এপ্রিল মাসের তাপপ্রবাহ ও সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় লিচুর ফলন তুলনামূলক কম হয়েছে। তাবদাহের কারণে লিচু পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকগুলো ফেটেও যাচ্ছে। এতে করে লিচুর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ বছর প্রায় ৪০ হাজার টন লিচুর উৎপাদন হতে পারে। সেই সঙ্গে ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ২০২২ সালে লিচুর ফলন হয়েছিল ২৮ হাজার টন। যার বাজারমূল্য ছিল ৬০০ কোটি টাকা। ২০২৩ লিচু উৎপাদন হয় ৩১ হাজার ৭৯০ টন। যার বাজারমূল্য ছিল ৪০০ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলাজুড়ে লিচুর চাষ হয় পাঁচ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। মোট লিচুর বাগান আছে পাঁচ হাজার ৪১৮টি। এসব বাগানের মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না-থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর ও মোজাফফরপুরী ১ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৪
এফআর