মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে তালশাঁসের জমজমাট ব্যবসা। জ্যৈষ্ঠ মাসেই দেশে সর্বত্র আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, গাব, আঁশফল ও তালের শাঁস পাওয়া যায়।
গ্রীষ্মকালে তালশাঁসে পানি থাকে প্রায় ৮০ শতাংশ। শাঁসের পানিতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, অল্প পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট। এছাড়াও ভিটামিন এ, বি, সি এবং মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানসহ আরও রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। যে কারণে এ মৌসুমি ফল তালশাঁস সব বয়সী মানুষের পছন্দ।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রীষ্মকালের খড়-তাপের ভ্যাপসা গরমে যখন জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ গরমের মধ্যে তৃষ্ণা মেটাতে তারা খাচ্ছে সুস্বাদু তালের শাঁস। মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় সব উপজেলার হাট-বাজারসহ আঞ্চলিক ও মহাসড়কের ধারে তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে। এ ফল খেতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ভিড় করছেন। আবার অনেকেই পরিবারের অন্য সদস্যের জন্য নিয়েও যাচ্ছেন।
প্রতিটি তাল বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। প্রতিটি তালের ভেতর তিন থেকে চারটি করে শাঁস হয়। তালশাঁস পুষ্টি গুণে ভরপুর এবং সম্পূর্ণ বিষমুক্ত হওয়াতেই মানুষের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি ১০ ঘণ্টায় একজন তালশাঁস বিক্রেতা প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার বিক্রি করে থাকেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী এলাকায় খন্দকার সেলিম নামে এক পোশাক শ্রমিক বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কারখানায় কাজ করে গলাটা শুকিয়ে গেছে। সে জন্য তালশাঁস খাচ্ছি। শাঁসের মূল্য একেবারেই সব শ্রেণি পেশার মানুষের হাতের নাগালে, যার ফলে সবাই ফলটি স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে পারে।
তালশাঁস বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি গত কয়েক বছর ধরে তালশাঁস বিক্রি করি। এ শাঁসের প্রচুর চাহিদা থাকায় একা একা তাল কাটার (তালশাঁস কেটে বের করা) কাজ করাটা এখন অনেক কষ্টের হয়ে পড়েছে। সকাল থেকেই সারা দিন তালশাঁস বিক্রি করি। সম্পূর্ণ ফরমালিন মুক্ত তালশাঁসের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। আমি প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার তালশাঁস বিক্রি করি বলেও জানান তিনি।
ইব্রাহিম হোসেন নামে আরেক তালশাঁস বিক্রেতা বলেন, দিনে তালের কোথায় তাল পাওয়া যায় তার খোঁজ করি। পরে তা কিনে নিয়ে আসি। সেই তাল আমার ছেলে সারা দিন বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করেন। এখন আর আগের মতো দেশে তালগাছ নাই, যে কয়টা গাছ আছে, তাও আর আগের মতো তাল ধরে না। প্রতিটি তাল গাছ সারা বছর হিসাবে ক্রয় করতে হয়, এ গাছের পরিচর্যা থেকে শুরু করে সব কিছু নিজেরই করতে হয়। একেকটি তাল গাছ ক্রয় করতে হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়, ভাগ্য ভালো হলে প্রতি গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার তাল বিক্রি করা যায়।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মানবেন্দ্র সরকার মানব বাংলানিউজকে বলেন, তালশাঁসে ভিটামিন এ, বি, সি এবং মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে। তালশাঁস খেলে শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ হয়। পাশাপাশি এ ফলে ত্বক ভালো রাখে, চুল পড়া বন্ধে সহায়তা করে, হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধসহ আরও নানা রোগের প্রতিষেধকের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তার চেয়ে বড় আরেকটি বিষয় হলো এ ফলে কোনো ধরনের প্রিজারভেটিভ নেই, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
আরআইএস