ঢাকা: অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের (মানি লন্ডারিং) মামলায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক ড. এসএম নাজমুল হক এবং তার স্ত্রী সাহেলা নাজমুলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) আসামিরা ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানালে বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই এ মামলায় দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন একই আদালত।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম গত বছরের ৩০ জুলাই সাহেলা নাজমুলের বিরুদ্ধে সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেক), ঢাকায় একটি মামলা করেন। সাহেলা নাজমুলের সঙ্গে তার স্বামী প্রকৌশলী নাজমুল হককেও মামলায় আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের পর আসামিরা উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত দু’জনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেন। এরপর তারা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানান এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার অজুহাত দেখিয়ে শুনানির জন্য আদালতের কাছে সময় চান। এভাবে কয়েক দফা তারিখ নিয়ে শুনানিতে কালক্ষেপণের পর গতকাল আদালতে এসে জামিন প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলায় বলা হয়, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারকের চলতি দায়িত্বে থাকাকালে এসএম নাজমুল হক ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন করার জন্য স্ত্রী সাহেলা নাজমুলের নামে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যৌথ মূলধনি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ দেখান। এতে তিনি অবৈধ আয়ের হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে দণ্ডবিধির ১০৯ ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ অপরাধে নাজমুল ও তার স্ত্রী সাহেলা নাজমুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২), ২৭ (১), দণ্ডবিধি ১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৬৪ লাখ ৭১ হাজার ১৩১ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রকৌশলী নাজমুল হক ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল বিকেলে রাজধানী ঢাকার সেগুন বাগিচায় হোটেল সেগুনে নগদ পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণকালে দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলাটি এখন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এ বিচারাধীন। ওই মামলার কারণে নৌ মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে।
এ দুটি ছাড়াও প্রকৌশলী নাজমুল হকের নামে আরও একটি মামলা রয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করে দুদক। মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। নাজমুল হকের কালো টাকা ও অবৈধ ক্ষমতার দাপটে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এ মামলায় তার বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৪
টিএ/এসএম