ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেহেনাকে হত্যার পর মাটিচাপা দেন স্বামী ও স্বজনরা

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
রেহেনাকে হত্যার পর মাটিচাপা দেন স্বামী ও স্বজনরা

সাভার (ঢাকা): নিখোঁজ হওয়ার দুই মাস পর আশুলিয়া থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রেহেনা বেগম (৩৭) নামে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ননদসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক নিহত রেহেনা বেগমের মরদেহ মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর প্রধান অভিযুক্ত স্বামী আওলাদ হোসেন অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে যান।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের মনোদিয়া চৌরাপাড়া গ্রামের আসামি পাপিয়া আক্তারের নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে থেকে মাটিচাপা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রেহেনা পারভীনের মা ৩ জুলাই নবাবগঞ্জ থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।  

নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার পাতিল গ্রামের লেহাজ উদ্দিনের মেয়ে। তিনি স্বামী আওলাদ হোসেন ও পাঁচ ছেলে মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতেন।  

আসামিরা হলেন- নিহতের স্বামী আওলাদ হোসেন (৪৭), তিনি একই গ্রামের মৃত আ. মান্নান ছেলে। একই থানার ছোট রাজপাড়া গ্রামের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে ও নিহতের চাচা শ্বশুর আমজাদ হোসেন (৬৪) ও নিহতের ননদ পাপিয়া আক্তার (৩৬)। এছাড়া মাকসুদা নামে আরও একজনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে আমজাদ হোসেন ও পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  

মামলার এজাহারে লেখা রয়েছে, রেহেনা বেগম ২ঌ জুলাই তার ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। পর দিন তিনি তার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি চলে যান। গত ৩ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে রেহেনা ফোন কল করে মাকে বলেন তাকে মারধর করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানান রেহেনা। এর পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। পরে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাম্বাসি ভুক্তভোগী পরিবারকে জানায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেহেনা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যায়নি। তবে তার স্বামী আওলাদ হোসেন গত ১৩ জুলাই অস্ট্রেলিয়া চলে যান। সন্দেহ হলে পরে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী পরিবার।

নিহতের ভাই রবিন বাংলানিউজকে বলেন, আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে লাশ ঘুম করেছে তার স্বামী, ননদসহ পুরো পরিবার। ঘটনার দুই মাস পরে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। খুনিদের বিচার চেয়ে অঝোরে কাঁদেন তিনি।  

নিহতের মা বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়েকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছি। পরে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাই। সেখানে সে নাগরিকত্ব পায়। পরে আওলাদ এক পর্যায়ে জোর জবরদস্তি করে বিয়ে করে আমার মেয়েকে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন আমার মেয়ের অনেক সম্পদ হয়। আমার মেয়ে নিজ নামে সব সম্পদ করে। সেই সম্পদের জন্য আওলাদ, আওলাদের বোন, ভাইসহ পুরো পরিবার আমার মেয়েকে কৌশলে হত্যার পর লাশ গুম করে। হত্যার দুই মাস পর আজ পুলিশ আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।

ঘটনা উন্মোচনের পেছনের কারিগর আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক অলক কুমার দে বাংলানিউজকে বলেন, গত ৩ জুলাই নবাবগঞ্জ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি হয়। ভুক্তভোগী রেহেনার একটি বাড়ি ছিল আশুলিয়ার স্বরলতা হাউজিং। সেখানে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আমাকে মৌখিক নির্দেশনা দেন ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দোহার সার্কেল) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম। পরে আমি রেহেনাকে উদ্ধারে তদন্ত শুরু করি। সেই তদন্তে আসামি পাপিয়া ও আমজাদকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করি। পরে নিখোঁজ ডায়েরির তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর খানকে সাথে নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করি। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মরদেহ আজ উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দোহার সার্কেল) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, জুনের শেষের দিকে রেহানা বেগম দেশে আসেন। তার কয়েকদিন পরে স্বামী আওলাদ হোসেনও অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরেন। তারা ২০ বছর ধরে সংসার করছেন অস্ট্রেলিয়াতেই। তাদের ৫ সন্তান রয়েছে। তবে তাদের বেশিরভাগ সম্পত্তি বাংলাদেশে রেহেনা বেগমের নামে। এসব সম্পদ দেখাশোনা করতে মাঝে মধ্যেই দেশে আসতেন রেহেনা।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সম্পদ আত্মসাতের জন্যই পরিকল্পনা অনুযায়ী রেহেনাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর লাশ ঘুম করতে মাটিচাপা দেয় আসামিরা। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হলে তদন্ত করে দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক আজ রেহেনার লাশ উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, যেহেতু সে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাই অ্যাম্বাসিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দিয়ে আসতে হয়। কিন্তু রেহেনা ফিরে না যাওয়ায় অ্যাম্বাসি থেকে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু গত ১৩ জুলাই স্বামী আওলাদ অস্ট্রেলিয়া চলে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।