ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আর্থিক সংকটে চিকিৎসা হচ্ছে না শিকলে বন্দি রতনের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
আর্থিক সংকটে চিকিৎসা হচ্ছে না শিকলে বন্দি রতনের

বরিশাল: জীবন বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ২৪ বছরের যুবক রতন দীর্ঘবছর শিকলে বন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।

অসহায় দরিদ্র পরিবার অর্থের অভাবে রতনের চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে রতন বাড়ৈর জন্মের পরে শৈশব কেটেছে প্রচণ্ড দুরন্তপনায়। মাতিয়ে রাখতেন পরিবারসহ বাড়ির সবাইকে। এই দুরন্তপনাই কাল হয়েছে রতনের জীবনে। আট বছর বয়সে খেলতে গিয়ে গাছের শিকড়ের সঙ্গে লেগে পরে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়। চিকিৎসার সুস্থ হলেও মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরতেন রতন বাড়ৈ। এঘটনার কিছুদিন পরে রতন বাড়ৈ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বলে জানান স্থানীয়রা।

এর মধ্যেই রতনের দরিদ্র পিতা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রেতা চিত্তরঞ্জন বাড়ৈর মৃত্যু হলে অসহায় হয়ে পরে ৫ সদস্যের ওই পরিবার। আর্থিক সংকটের কারণে থেমে যায় রতন বাড়ৈর চিকিৎসা সেবা। নিয়মিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দিনে দিনে রতনের পাগলামি বেড়ে যায়। সে বাড়িঘর ভাঙচুর, মানুষজন দেখলেই সে তাদের উপর হামলা করে কামড়িয়ে আহত করে।

এ কারণে রতনের মা বোনেরা বসত ঘরের পিছনে একটি টিনের চালা ঘরে রতন বাড়ৈকে দীর্ঘ আনুমানিক প্রায় ১৬ বছর ধরে কোমড়ে শিকল বেঁধে তালা দিয়ে রেখেছেন। অনেক সময় রতন নিজের হাতে খাবার খেলেও পাগলামির কারণে অনেক সময় খাবার ছুড়ে ফেলে দেন। পরিবারের লোকজন মাঝে মধ্যে তাকে গোসল করিয়ে দেন। হামলার ভয়ে বাড়ি ও পরিবারের সবাই তার কাছে যেতে ভয় পায়। এলাকার লোকজন রতনকে দেখতে এলেও ভয়ে কাছে যায় না।

শিকলে বন্দি রতনের দরিদ্র পরিবার আর্থিক সংকটের কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

রতন বাড়ৈর মেঝ বোন সীমা বাড়ৈ বলেন, ছোটবেলায় আমার ভাই রতন বাড়ৈ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ছিল। আট বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না আমার ভাইয়ের। সু-চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

এঘটনায় প্রতিবেশী কমল বাড়ৈ বলেন, রতনের মা মনিকা বাড়ৈ বর্তমানে অপারেশন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আর্থিক সংকটের কারণে রতনের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। অন্যদিকে তাদের পরিবারের ব্যয়ভার বহন করার মত কেউ না থাকায় সরকার ও ধনী ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে রতন বাড়ৈর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে তাও দেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৪
এমএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।