ফরিদপুর: নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে নতুন প্রেসক্লাব গঠনের অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সালথা উপজেলা প্রেসক্লাব গঠন করেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় সংবাদিকরা জানান, নতুন গঠন করা প্রেসক্লাবটি সভাপতি হয়েছেন শ্রমিক লীগ নেতা টুটু চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. আরিফুল ইসলাম।
তারা আরও জানান, একটি হোটেলে তিন-চারজন বসে সালথা উপজেলা নামে প্রেসক্লাবের ১৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তালিকা ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিতে মাত্র একজন সাংবাদিক থাকলেও অন্যরা কেউ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নয় এবং সাংবাদিক হিসেবে তাদের কেউ তেমন চিনেনও না। এর মধ্যে সদস্য পদ পাওয়া শওকত হোসেন মুকুল ফরিদপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া রুবেল রানা ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া আরিফুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।
স্থানীয়রা সাংবাদিকদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সালথা প্রেসক্লাবের সদস্য হন টুটু চৌধুরী। এরপর তিনি একটি পত্রিকার আইডি কার্ড ভাগিয়ে আনেন। টুটু চৌধুরী পঞ্চম শ্রেণি পাস। নিউজ লিখতে না পারলেও নিজেকে বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি শুরু করেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা অজুহাতে চাঁদা তুলেন। অবৈধভাবে মাটি-বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এছাড়া নান অনিয়ম, অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত। এক পর্যায়ে তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। কিন্তু ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ায় ভয়ে কেউ টুটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে মুখ খুলেননি। লাবু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় থেকে বছরের পর বছর মাদক কারবারি, টেন্ডার বাণিজ্য ও থানায় দালালি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গত ০৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর টুটু চৌধুরীকে সালথা প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি সাবেক এমপি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর সম্পদের পাহাড় নিয়ে নিউজ করায় কালের কণ্ঠের সালথা-নগরকান্দা প্রতিনিধি নুরুল ইসলামকে হত্যার হুমকি দেন টুটু চৌধুরী।
স্থানীয়রা জানান, সালথা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ইমদাদ আলী খুসরুর সৎ ভাই টুটু চৌধুরী। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টুটু চৌধুরীও ভোল পাল্টে ফেলেন। টুটুর এক ভাই বিএনপি নেতা ও আরেক ভাই জামায়াত নেতা। যে কারণে তিনি এখন নিজেকে বিএনপি নেতার ভাই পরিচয় দিয়ে থানায় দালালি ও ফের চাঁদাবাজি শুরু করেছেন।
টুটুর এমন কর্মকাণ্ড পুলিশ-প্রশাসনের নজরে এলে তিনি নতুন একটি প্রেসক্লাব গঠন করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকার বিনিময় কতিপয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন ভূঁইফোড় অনলাইন ও কিছু অখ্যাত পত্রিকার কার্ড বানিয়ে দেন। এর মধ্যে কম্পিউটারের দোকান থেকে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়েও বেশ কিছু সদস্য করা হয়েছে। সারা দেশে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে আটক এড়াতে, পুলিশ-প্রশাসন থেকে সুবিধা পেতে ও ফের চাঁদাবাজি করার পরিকল্পনা থেকেই টুটু চৌধুরী এই প্রেসক্লাব গঠন করেছেন বলে মনে করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এ ব্যাপারে সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. সেলিম মোল্যা বলেন, ‘টুটু চৌধুরীকে আমি সংবাদ লিখতে দেখিনি। সে একজন উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি। তার খারাপ আচরণের কারণে সালথা প্রেসক্লাব থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন জানতে পারলাম, তিনি নামধারী একটি সাংবাদিক সংগঠন করে কিছু লোকজন নিয়ে সালথা প্রেসক্লাবের ভবন দখলের হুমকি দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনি সহযোগিতা নেব। এছাড়া সালথা উপজেলা প্রেসক্লাব নামের সংগঠনে আমার মালিকানাধীন পত্রিকার আইডি কার্ডধারী দুজন সদস্য দেখা যায়। যারা আমার পত্রিকার প্রতিনিধি না, তাদের আমি কোনো আইডি কার্ড দেইনি, কেননা এরা ভুয়া। ’
এসব অভিযোগের বিষয়ে সালথা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ টুটু চৌধুরীর মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে এই প্রথম জানতে পারলাম। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। এলাকায় কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
এসআরএস