ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জুন ২০২৫, ০৯ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদযাত্রায় সাভারের সড়কে ত্রিমুখী চাপে ভোগান্তির শঙ্কা

মাহিদুল মাহিদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০৬, জুন ৪, ২০২৫
ঈদযাত্রায় সাভারের সড়কে ত্রিমুখী চাপে ভোগান্তির শঙ্কা

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ বুধবার (৪ জুন) ছিল শেষ কর্মদিবস।

এদিন বিকেল থেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করে বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন মানুষ। শেকড়ের টানে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতে গ্রামের পানে ছুটছেন শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা। বলা যায়, সন্ধ্যা নামার আগেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা।  

এবারের ঈদে সাভারে সড়কে জলাবদ্ধতা ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান নির্মাণ কাজের কারণে ত্রিমুখী যানবাহনের চাপে চরম ভোগান্তির শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ যাত্রীসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা যায়, আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় সড়কটির অধিকাংশ স্থানে খানাখন্দ ছাড়াও রয়েছে জলাবদ্ধতা। ইউনিক থেকে জামগড়া পর্যন্ত হাঁটুপানিতে ডুবে আছে সড়কটি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ডাইভারশনের কারণে সড়ক হয়েছে সংকুচিত। অন্যদিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কেও নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে বাইপাইল থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত সড়কে ডাইভারশনের কারণে সড়ক সরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করবে অবাধে। এর ওপর কোরবানির পশুবাহী বিভিন্ন যানবাহন প্রবেশ করবে ঢাকায়। ফলে এসব সড়কে ত্রিমুখী চাপের সৃষ্টি হতে পারে। এই চাপে তীব্র যানজটে ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে যাত্রীদের।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় জীবিকার তাগিদে দেশের প্রায় সব জেলা থেকে এসে গড়েছেন বসতি। তাদের বেশিরভাগই এখানকার বিভিন্ন পোশাক শিল্পে কাজ করছেন। এসব শিল্প এবার একদিনে ছুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ঘরেফেরা মানুষের চাপ কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহন পেশাজীবীরা। এছাড়া সাভারের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল আজহা ঘিরে বসেছে পশুর হাট। অন্যদিকে দেশের বৃহৎ পশুর হাট বসেছে গাবতলীতে। এসব হাটে গরুভর্তি অসংখ্য ট্রাক প্রবেশ করছে ঢাকায়। যে কারণে সড়কে বাড়তি চাপের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সকল কারণে বাড়তি চাপে শঙ্কা রয়েছে ভোগান্তির।

গরুবাহী ট্রাকেই বাড়তি চাপ

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ছাড়াও সাভারের বিভিন্ন স্থানে বসছে অস্থায়ী পশুর হাট। প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাকভর্তি গরু-ছাগল নিয়ে এসব হাটে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদযাত্রা শুরু হলে গরু, ছাগল ও মহিষ বহনকারী এসব যানবাহনের কারণে ঢাকার প্রবেশপথ যেমন সাভার, আমিনবাজার, চন্দ্রা এলাকায় সৃষ্টি হতে পারে তীব্র যানজট।

উত্তরবঙ্গের বগুড়া থেকে গরুভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢাকায় এসেছেন ট্রাকচালক হাসান আলী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখনও ঈদযাত্রা শুরু হয়নি। তবে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের যে বেহাল দশা, তাতে এখনই সঠিক গতিতে গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ঈদযাত্রা শুরু হলে আমরা তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছি।  

মহাসড়কে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের বাগড়া

ঈদযাত্রা উপলক্ষে একদিকে যাত্রী ও পরিবহনের বাড়তি চাপ অন্যদিকে মহাসড়কে বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলারের বাগড়া। এতে যেমন শঙ্কা বাড়ে দুর্ঘটনার তেমনি বাড়ে যানজটের সম্ভাবনা। মহাসড়কে এসব যানবাহনের আধিপত্য থাকায় যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ যাত্রীরাই।  

ঈদে সাভারের আশুলিয়া থেকে গাইবান্ধা যাবেন নুর মোহাম্মদ মোস্তফা নামের পোশাক শ্রমিক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে থ্রি-হুইলার যত্রতত্র চালায় এর চালকরা। তারা কোনো ট্রাফিক আইন মেনে থি-হুইলার চালান না। এসব যানবাহনের কারণে প্রতিবছরই সড়কে যানজট লেগে থাকে। এছাড়া এসব যানবাহন সড়কের উল্টোপথে যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। এতেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. রিজওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এসব থ্রি-হুইলার আইন ভঙ্গ করলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তিনি থ্রি-হুইলার চালকদের মহাসড়ক পরিহার করার আহ্বান জানান।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজে সংকুচিত সড়কপথ

টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে চলছে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। এতে রাস্তার একাধিক অংশে ব্যারিকেড, ডাইভারশনসহ সড়কের পাশে মাটি, রড ও মেশিন রেখে কাজ চলছে। ফলে যানবাহন চলাচলের জন্য খোলা অংশ হয়ে পড়েছে সংকুচিত। এতে ঈদের সময় বাড়তি চাপ সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।  

তবে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু সড়কের এই অংশে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে তাতে সড়ক পথে ঈদে ঘরেফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করা সম্ভব নয়। তবে ভোগান্তি সহনীয় পর্যায়ে নিতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।

বৃষ্টিতেই থেমে যায় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক

বরাবর পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হোক বা না হোক এই সড়ক প্রায় সব সময় থাকে পানির নিচে। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে যায়, ফলে যানচলাচলে সৃষ্টি হয় স্থবিরতা। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় গর্ত হয়ে যায়। এছাড়া সড়কটিতে হাঁটুপানি জমায় সড়কের অবস্থা না বুঝে যানবাহন চালাতে কষ্ট হয় চালকদের। ফলে যানচলাচলে ধীরগতিসহ সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।  

এ ব্যাপারে স্মার্ট পরিবহনের চালক নুর-আলম বাংলানিউজকে বলেন, সড়কটির ইউনিক থেকে ছয়তলা পর্যন্ত বেহাল দশা। সড়কের এই অংশ পানি জমে থাকে হাঁটুপানি। পানির কারণে সড়ক দেখা যায় না। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। তাই অনেক সাবধানে ধীরগতিতে যানবাহন চালাতে হয়। এ কারণে এই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।  

ঈদযাত্রায় বাড়তি পরিবহন ও যাত্রীর চাপ

ঈদযাত্রায় সড়কে সৃষ্টি হয় বাড়তি পরিবহন ও বাড়তি যাত্রীর চাপ। সাভার শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে লাখ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে বসতি শুরু করেছেন। যারা প্রতি ঈদে নাড়ির টানে ছুটে যায় গ্রামে। আর এই যাত্রীদের বিশাল একটা অংশ পরিবহনে প্রয়োজন হয় বাড়তি যানবাহনের। যাত্রীদের চাপ অনুযায়ী বাড়তে থাকে সড়কে যানবাহনের চাপ। এই অতিরিক্ত যানবাহন এবং যাত্রীর চাপে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।  

ঈদযাত্রার বিষয়ে পরিবহন মালিক জিএম মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে শিল্পাঞ্চলের সকল কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। সাভার আশুলিয়া থেকে লাখ লাখ শ্রমিক গ্রামে যান। দু-একদিনের ব্যবধানে এসব লোক সাভার ছেড়ে চলে যান। এতো লোকের একবারে সাভার ছেড়ে যাওয়াতে সড়কে ব্যাপক চাপের সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের চাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সড়কেও নামে বাড়তি পরিবহন। ফলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এবারও তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে।

ট্রাফিক বিভাগের ও হাইওয়ে পুলিশের প্রস্তুতি

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা উত্তর ট্রাফিক বিভাগ ও সাভার হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুবাহী ট্রাকের জন্য নির্ধারিত রুট ও আলাদা ট্রাফিক কন্ট্রোল পরিকল্পনা, অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ ডাইভারশনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।  

সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহমেদ বলেন, সড়কে স্ট্রাকচারাল যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো সড়ক ও জনপথ দেখবে। এসব সমস্যা সমাধানে সড়ক বিভাগ ব্যবস্থা নিয়েছে আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। এছাড়া গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে এখনই সড়কের কিছু অংশে যানজটের ধীরগতি রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কে ওয়াচ টাওয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সকল ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  

এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।