ঢাকা, বুধবার, ১১ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

সংস্কারে কর্ণপাত না করলে দলগুলোকেই মাশুল দিতে হবে: বদিউল আলম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৪, আগস্ট ২৬, ২০২৫
সংস্কারে কর্ণপাত না করলে দলগুলোকেই মাশুল দিতে হবে: বদিউল আলম বদিউল আলম মজুমদার।

ঢাকা: রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংস্কারের বিষয়ে কর্ণপাত না করে, তাহলে এর মাশুল তাদেরই দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে জনগণের মতামত আছে।

রাজনৈতিক দলগুলো তা কর্ণপাত না করলে মাশুল দিতে হবে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার তার মাশুল দিয়েছে। যে পথে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে, তারাও যদি অগ্রসর হয় তারাও দানবে পরিণত হবে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃক আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।  

সুজনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিনের সভাপতিত্বে সংলাপে তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। স্বৈরশাসকরা কীভাবে মাশুল দিয়েছে তা আমরা দেখেছি। এমনকি শেখ হাসিনার পতনের বিষয়টি মনে রাখতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আগামীতে জুলাই সনদের সুপারিশগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য এগুলো বাস্তবায়িত করা দরকার। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের কাজ করে। রাজনৈতিক দলগুলোর এখানে দায়িত্ব আছে। তাদের সদিচ্ছা থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিলুপ্ত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও তা মেনে চলে না দলগুলো।  

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ প্রণয়নে আমাদের সার্থকতা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর। সনদ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলেই এতদিনের কষ্ট সার্থক হবে। এখানে অনেকেরই করণীয় আছে। রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দার বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা তা যে শুধু জুলাই সনদ নিয়ে, তা সঠিক নয়। ভেতরে ভেতরে অনেক বিষয় কাজ করছে। যে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি কমিশন বার বার আলোচনার টেবিলে আনলেও বারবারই তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে সেই সমঝোতায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। দলগুলোর আন্তরিকতা ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সফল হওয়া সম্ভব নয়।

সংলাপে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য মো. একরাম হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত করার পক্ষে মতামত দিয়েছেন দেশের নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। নাগরিকরা দৃঢ়ভাবে মনে করেন, দুর্নীতি মোকাবিলায় দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এটি কমিশনকে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

তিনি আরও বলেন, জরিপ ও সংলাপে অংশ নেওয়া নাগরিকদের একটি বড় অংশ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুদকের কার্যক্রম অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে থাকে। সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর কমিশন স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে এবং দুর্নীতি দমন কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে।

সংলাপে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তরিত হলে দুদককে পার্লামেন্ট বা সরকারের সরাসরি নির্দেশের বাইরে রাখা সম্ভব হবে। ফলে দুর্নীতি দমন শুধু অনুসন্ধান বা অভিযোগ সমাধানে সীমাবদ্ধ না থেকে একটি স্থায়ী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারবে। তবে, শুধুমাত্র শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার মাধ্যমে দুদকের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না। সাংবিধানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে কমিশনের নীতি-নির্ধারণ, বাজেট ও পরিচালনায় সরকারি হস্তক্ষেপ কমানো সম্ভব হবে। এ প্রস্তাবনা সংসদে উপস্থাপন করলে দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।

টিএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।