সবার জন্য পরিবেশ বান্ধব, দুর্যোগ-সহনশীল ও বিকেন্দ্রীকৃত আবাসন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে ‘পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সবার জন্য দুর্যোগ-সহনশীল, পরিবেশবান্ধব ও বিকেন্দ্রীকৃত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বসতি কোনো বিলাসিতা নয়, এটিকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, শুধু শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আধুনিক আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, বরং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পরিবহনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিত করেই বসতি গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই বাস্তবতায় এখন থেকেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিলে বিপুলসংখ্যক মানুষের পুনর্বাসন একটি ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব এবং কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জলবায়ু সহনশীল আবাসন নির্মাণে মডেল প্রকল্প নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বার্থে একপাক্ষিক নগরায়ণ ও আবাসন ব্যবস্থা সমতা ও অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সংকুচিত করছে। ফলে একজন বিত্তশালী একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক হলেও একজন মধ্যবিত্ত নাগরিক একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন না। বসতি নিশ্চিত করা তাই রাষ্ট্রের সংবিধানসম্মত দায়িত্ব এবং মানবাধিকারের অংশ হওয়া উচিত।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, উপকূলীয় শহরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত তীব্র আকারে প্রকাশ পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা জনজীবন, কৃষি এবং নগর অবকাঠামোকে গভীর সংকটে ফেলে দিচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো একটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ডেপুটি আবাসিক সমন্বয়কারী সোনালী দয়ারত্নে।
এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোছা. ফেরদৌসী বেগম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মো. আসিফুর রহমান ভূঁইয়াসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা ‘বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে একটি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং পরে তিনদিন ব্যাপী বসতি মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
এর আগে বিশ্ব বসতি দিবসে শেরে বাংলা নগর এলাকায় বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
আরকেআর/এএটি