ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

উত্তরা ক্লাবে ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রেসিডেন্টের নয়-ছয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
উত্তরা ক্লাবে ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রেসিডেন্টের নয়-ছয় ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা ক্লাবের ভবন নির্মাণে  প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ না মেনে রাজউকের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মাত্র তিনদিনের মধ্যে ভবন নির্মাণের অনুমোদন নেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের।



আর এই প্রতারণার জন্য ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসির ইউ মাহমুদকেই দুষছেন ক্লাব সদস্যরা।

সূত্র জানায়, ক্লাবটিতে গত ৬ জুন অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় ১০তলা ফাউন্ডেশনসহ একটি মাল্টি পারপাস ৬ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই জুন মাসেরই শেষ দিকে নির্মাণ যজ্ঞ শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে ক্লাব সদস্যরা রাজউকের অনুমোদন‍পত্র দেখতে চাইলে ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন মাহমুদ গড়িমসি শুরু করেন। পরে চাপের মুখে ১৯ আগস্ট তিনি একটি অনুমোদনপত্র হাজির করেন। যাতে ভবন নির্মাণ অ্যাক্ট ১৯৫২ (অ্যাক্ট নম্বর-২, ১৯৫৩) এর ধারা ৩ অনুযায়ী সংশোধিত ও প্রস্তাবিত ইমারত/প্রকল্প হিসেবে উত্তরা ক্লাবে চার তলা সমাবেশ ভবনের বর্ধিতাংশের সঙ্গে ৬ তলা সমাবেশ ভবনের নকশা অনুমোদনের কথা বলা আছে।

কিন্তু উত্তরা ক্লাবের বিদ্যমান ভবনটি ৪ তলা নয়, ৬ তলা বিশিষ্ট। তাই বর্তমান ভবনের উপরের দুইতলা যে অনুমোদনবিহীন তা রাজউক এর অনুমোদনপত্রেই বেরিয়ে আসে।

অনুমোদন পত্রটিতে স্বাক্ষর রয়েছে রাজউকের অথরাইজড অফিসার মিজানুর রহমানের। উত্তরা ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত আছে তার। আরো যাতায়াত আছে রাজউকের সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল হামিদ মিয়া ও মো. আব্দুল হাই এর।

এছাড়া ভবন নির্মাণে বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের সুপারিশ মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে ক্লাব সদস্যদের পক্ষ থেকে।

তাদের দাবি, অধ্যাপক ড. মো. কবিরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. এএফএম সাইফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের একটি দল ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর উত্তরা ক্লাব এর ভবন ও জমি সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

তাদের প্রতিবেদনেও উত্তরা ক্লাবের এ ব্লকে চারতলা ভবন আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে- সেখানে নির্মাণ কাজে ফাউন্ডেশনের ধরন, মাটি পরীক্ষা রিপোর্ট, নির্মাণ সামগ্রীর রিপোর্ট, নির্মাণ সামগ্রীর গুণগত মানের ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য নেই।

সব কিছু বিবেচনায় ভবনটি ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে বলে অভিমত দেয় বুয়েট বিশেষজ্ঞ দল।

ভবন বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, রেস্ট হাউজ ভবনের ৫০৬ এবং ৫০৭ নম্বর কক্ষে ফাটল দেখা গেছে। ভবনের ডিজাইনের সঙ্গে নির্মাণ ডিজাইনের মিল নেই। ক্লাবের তিনটি ভবন তিন উচ্চতায়। একটির সঙ্গে অন্যটির নির্মাণ সংযোগ নেই। ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত সামগ্রী সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে উত্তরা ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসির ইউ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি।

বুয়েটের রিপোর্ট কেউ বিকৃত করে প্রচার করছে দাবি করে তিনি বলেন,  মাত্র ১০/১২ বছর আগে যে ভবন নির্মাণ হলো সেটা এতো তাড়াতাড়ি ব্যবহারের অনুপযোগী হয় কি করে?

ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেন, নকশায় কোনো ত্রুটি নেই। নামিদামি ডিজাইনাররা নকশা করেছেন।

রাজউক কর্মকর্তাদের ক্লাবে আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ক্লাবে আমরা সবাইকেই আসতে বলি। পুলিশ, ইনকাম ট্যাক্স অফিস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এখানে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। যেমন, সিটি করপোরেশনকে অনারারি মেম্বারশিপ দেওয়া হয়েছে। এটা তো আমাদের দোষ না।

রাজউক থেকে অনুমোদন বের করতে এক মাস ৩ দিন সময় লেগেছে বলেও দাবি করেন নাসির ইউ মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।