ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ছবি: শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেছেন, ঢাকাকে মানুষের বাসযোগ্য করতে প্রয়োজন সকলের সমন্বিত উদ্যোগ।
 
রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আয়োজিত সেমিনারে এ কথা বলেন বক্তারা।

খসড়া ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানের ওপর সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় রাজউক ভবনে।
 
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন আব্দুল্লাহ’র সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
 
বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ।
 
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আগে (২০১০ সালে) যে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) হয়েছিলো তা নিয়ে অনেক হই-চই হয়েছে। এটি রিভিউ করা হচ্ছে। যারা ড্যাপ প্রণয়ন করেছেন, তারা বাস্তবে স্থান পরিদর্শন না করেই করেছেন। গুগল ম্যাপ দেখে শুধু লাইন টেনে পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু পরিকল্পনা শুধু লাইন টেনে করলেই হবে না, বাস্তবসম্মত করতে হবে।
 
তিনি বলেন, ঢাকা শহর রিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার উপায় নেই, ছোট ছোট দোকানে দখল হয়ে গেছে। আবার ওয়াসা খাল উদ্ধার করছে, আর নগরবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট করছে। এভাবে খাল দখল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। ঢাকাকে পরিকল্পিত নগরী করতে হলে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
 
তিনি আরও বলেন, গুলশানে আবাসিকের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে সবাই বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করেছেন। নিচতলায় বাণিজ্যিক ভবন আর ওপরে বসবাসের স্থান। এছাড়া ঢাকায় বাণিজ্যিক অঞ্চলের বাইরে আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন করা হয়েছে। ফুটপাত থেকে ৫ ফুট দূরে ভবন ওঠার কথা থাকলেও ফুটপাত ঘেঁষে করা হচ্ছে।
 
মন্ত্রী জানান, নিয়মের বাইরে গিয়ে যেসব ভবন করা হয়েছে সেগুলো সিলগালা করে দেওয়া হবে। যেসব নদী-খাল ভরাট হয়ে গেছে সেগুলো উদ্ধার করা হবে। তবে এসব রাজউকের একার দায়িত্ব না। এসব বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
 
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, পরিকল্পনা ৫ বছর পর পর রিভিউ করার কথা। কিন্তু গত ১৫ বছরেও ড্যাপের পরিকল্পনা রিভিউ করা হয়নি। এখন নতুন যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে আগের পরিকল্পনায় কি সমস্যা ছিলো তা বলা হয়নি। পরিকল্পনায় নতুন কি আনা হয়েছে সে সম্পর্কেও বলা হয়নি।
 
তিনি বলেন, দখল করতে করতে ঢাকার চারপাশের নদী খালে পরিণত হয়েছে। যদি অন্যায়ভাবে নদী দখল করা হয়, তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। বেড়ায় খেত খাওয়া বন্ধ করতে হবে। আমরা দু’জন পরিকল্পনা করে এসেছি সরিষার ভেতরে কোথায় ভূত আছে তা আমরা দেখবো।
 
সাঈদ খোকন বলেন, বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অনুপযোগী শহরে পরিণত হয়েছে আমাদের প্রাণের ঢাকা। মানুষের সেবা দিতে ৫৬টি দফতর রয়েছে। কিন্তু একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সমন্বয় নেই। ঢাকার অন্যতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসার। কিন্তু সমস্যা সমাধানে জনগণ আশা করছে, মেয়ররা কিছু করবেন।
 
তিনি বলেন, এভাবে চলতে পারে না। সকলে মিলে সম্মিলিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করতে হবে। তাহলেই ঢাকা বাসযোগ্য হবে। ড্যাপের বিষয়ে আমাদের আরও সময় দিতে হবে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের এ পরিকল্পনা তৈরিতে রাখতে হবে।
 
রাজধানীর সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানী কি রাজউকের এরিয়া? এটি কি ডিএমপি’র এরিয়া? নাকি সিটি কর্পোরেশনের এরিয়া? নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর কি রাজধানীর অংশ? একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েও এটি আমরা জানতে পারলাম না। লজ্জার বিষয় স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েও আমাকে বলতে হচ্ছে রাজধানীর সীমানা কি?
 
ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, আমরা কি বছরের পর বছর পরিকল্পনা করে যাবো? নাকি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো? দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৪ বছর হয়ে গেছে, তারপরও আমরা শুধু পরিকল্পনাই করে যাচ্ছি। বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
 
আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ড্যাপের পরিকল্পনায় ত্রুটি রয়েছে। এতে গাজীপুরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরিকল্পনায় গাজীপুরের যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বাসস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা নেই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৫
এএসএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।