ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

উত্তরাঞ্চলে পানিবাহিত রোগের উপদ্রপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
উত্তরাঞ্চলে পানিবাহিত রোগের উপদ্রপ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রংপুর, গাইবান্ধা থেকে: উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানি কমতে শুরু করার পর বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের উপদ্রপ।
 
এমনিতেই বানভাসী হয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষদের।

আর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, রোগের উপদ্রপ। বন্যাকবলিত এসব মানুষদের অসহায়ত্ব প্রকাশ ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই।
 
তবে চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে অনেক রোগীর অভিযোগও রয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে এসে আবার আক্রান্ত হচ্ছেন রোগে।
 
রংপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসা করাচ্ছেন মোছা. রাশেদা বেগম।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) তিনি জানান, তার পরিবারের সাত থেকে আটজন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তার স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ। গত তিনদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি।

রাশেদা বেগম বলেন, বন্যায় তাদের বাড়িঘরে পানি উঠেছিল। কয়েকদিন পানির নিচে টিউবওয়েলও ছিল। এছাড়া সেই সময় ভাত রান্না করে খাওয়ার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। পানির জন্য খুবই কষ্ট হয়েছে।
 
চিকিৎসকেরা মনে করছেন, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন, আবহাওয়া ও টিউবওয়েলের গভীরতা কম থাকায় বন্যা পরবর্তী দ্রুত ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বন্যাকবলিত এলাকায়।
 
তবে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, গাইবান্ধা জেলার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষেরা। গাইবান্ধা সিভিল সার্জন অফিস বলছে, এ পর্যন্ত ৫১৮ জন রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন। আর চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৬২ জন। গত এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
 
আর কুড়িগ্রাম জেলায় গত ২০ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪৮ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন প্রায় ১০০ জন রোগী।
 
সরেজমিন রংপুর সদর হাসপাতালে দেখা যায়, ১০ জনের বেশি রোগী ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে প্রায় সবাই বন্যাকবলিত পরিবারের সদস্য।

রোগীর আত্মীয়রা জানান, যাদের অবস্থা খুবই খারাপ, কেবল তাদেরই হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
 
গাইবান্ধা সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাকে গাইবান্ধা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।
 
তিনি জানান, গাইবান্ধা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় গাদাগাদি করে ডায়রিয়া রোগীকে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর একটু সুস্থ হলেই দেওয়া হচ্ছে ছাড়পত্র। কেননা, প্রতি মুহূর্তে রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। তবে তাদের চিকিৎসা ভালো। অনেকেই ভালো হয়েছেন।
 
গাইবান্ধার জেলার গিদারী ইউনিয়নের একরামুল বলেন, ভালো চিকিৎসার জন্য তিনি তার মাকে রংপুরে নিয়ে এসেছেন। সব জায়গায়তেই ভালো চিকিৎসা হয়। তবে মনকে বুঝ দিতে মাকে চিকিৎসা করাতে এখানে নিয়ে এসেছেন তিনি।  
 
গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মেলেন্দু চৌধুরী বলেন, ধারণক্ষমতার বাইরে রোগীর সংখ্যা হওয়ায় অনেকের মনের মতো চিকিৎসা নাও হতে পারে। তবে সবাইকে আমরা সমান গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। ফলে, কেউ কেউ মন খারাপ করতেই পারেন।
 
হঠাৎ এভাবে ডায়রিয়ার উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এ চিকিৎসক জানান, অনিরাপদ পানির কারণেই হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ জেলায় টিউবওয়েলগুলোর যে গভীরতা থাকার কথা, তা নেই। এছাড়া সাপ্লাই পানির ব্যবস্থাপনাও ভালো নয়।
 
বর্তমানের আবহাওয়াই এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, এ সময় দ্রুত ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, পানিবাহিত ও ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
 
প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো, খাবার পানি ফুটিয়ে অথবা পানির রোগ প্রতিরোধ করে এমন ট্যাবলেট দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে। খাবারের আগে হাত-পা ভালোভাবে ধুতে হবে। এছাড়া অবস্থা খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে কাছের কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
একে/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।