ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

অগ্রিম টিকিট কেনার অপেক্ষায় তাসের আড্ডা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
অগ্রিম টিকিট কেনার অপেক্ষায় তাসের আড্ডা ছবি : রাজিব /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকালে। সকাল হতে ঢের বাকি।

অথচ চলে এসেছেন কতো আগে। কিছুতেই সময় কাটছে না। অলস সময় পার করতে তাই জনাকয়েক মিলে বসিয়েছেন তাসের আড্ডা।

তাদের দেখাদেখি আরও ক’জন। এদের দেখাদেখি আরও ক’জন। এভাবে নয়টি তাসের আড্ডার দেখা মিললো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঈদুল আজহার অগ্রিম টিকিট বিক্রির কাউন্টারের সামনে।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে টিকিট বিক্রি। তার আগে সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে টিকিট কাউন্টারে জড়ো হতে শুরু করেন প্রত্যাশী লোকজন। এদের কেউ কেউ আবার সোমবার বিকেল থেকেই কাউন্টারে বসে গেছেন।

সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিনে দেখা যায়, শ’খানেক মানুষ অগ্রিম টিকিটের জন্য অপেক্ষায় বসেছেন এখানে। কেউ খোশগল্পে মেতেছেন, কেউ জায়গাটা খানিক সময়ের জন্য ছেড়ে ভবঘুরের মতো ঘুরছেন, আবার কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে মেতেছেন তাসের আড্ডায়।

এ আড্ডা অনেকটা বিরামহীনই দেখা গেল। এক আড্ডায় খেলোয়াড়ের সংখ্যা চারজন। খেলোয়াড়দের ঘিরে প্রতিটি আড্ডায় আছেন আরও কয়েকজন করে। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে সম্মিলিত কণ্ঠে সুর উঠছে বিভিন্ন বাংলা গানের।

অবশ্য, কাউন্টারে এমন খোশগল্প-আড্ডাবাজির হাকডাকের মধ্যেই কেউ আবার ক্লান্ত হয়ে গভীর ঘুমে ঢলেও পড়েছেন।

এরই মধ্যে একদলকে লাইন নিয়ে বাকবিতণ্ডা করতে দেখা গেল। তাদের মধ্যে রেলওয়ে পুলিশের এক সদস্যকেও দেখা যায়। মমিনুল নামের ওই পুলিশ সদস্য লাইন তৈরিতে অনেকটা সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছিলেন।

দিনাজপুরের আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য অন্য সাধারণ যাত্রীর মতো তিনিও লাইনের সিরিয়াল নম্বর নিয়েছেন। অবশ্য তিনি নিজ দখলে দু’টি সিরিয়াল (৭ ও ৮ নম্বর) রেখে দিয়েছেন।

যাত্রী সেজে মমিনুলের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার বান্ধবীদের টিকিট কাটার জন্য বিকেল ৫টার সময় লাইনে সিরিয়াল দিয়েছি। ‌আমার কাছে ৭ ও ৮ নম্বর দু’টি সিরিয়াল আছে। অবশ্য আমার একটি সিরিয়াল লাগবে না। আপনি চাইলে একটি নিতে পারেন। তবে যারা সিরিয়াল করছে, এদের সকালের নাস্তার জন্য কিছু দিয়ে দিয়েন। ’

এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এভাবে সিরিয়াল (লাইনে না দাঁড়ানো) করা অবৈধ। তারপরও আপনাদের সুবিধার জন্য আমরা সিরিয়াল করার সুযোগ করে দিয়েছি, যেন আপনাদের দুর্ভোগ না হয়।

টিকিট বিক্রি শুরু সকাল ৯টায়
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিক্রি শুরু হবে ২০ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম ট্রেনের টিকিট। এরপর ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২১, ২২, ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট।

আর ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে।   ওই দিন বিক্রি হবে ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট। এরপর ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৮, ২৯, ৩০ সেপ্টেম্বরে ও ১ অক্টোবরের টিকিট।

টেলিভিশনে মুখখানা দেখানোর অভিলাস
নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে অগ্রিম টিকিট কাটার জন্য যেমন কেউ রাত জেগে অপেক্ষা করছেন কমলাপুরে, তেমনি কেবল টেলিভিশন পর্দায় নিজের মুখখানা দেখানোর অভিলাসেও কেউ বসে রয়েছেন এখানে। লালমনিরহাটের ওয়াসিম (ফকিরাপুলের একটি মুদি দোকানের কর্মচারি), দিনাজপুরের সাইফুল (ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা) ও আজম, আরামবাগের হাসান (টিকাটুলির কাপড়ের দোকানের কার্মী), খুলনার রিয়াজসহ এমন আরও কয়েকজনকে পাওয়া যায়, যারা নিজেকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখার আশায় রাত জেগে অপেক্ষা করছেন স্টেশনে। যখনি কোনো টেলিভিশনের ক্যামেরা দেখছেন, তারা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সেখানে।

চাই ভালো আসন
অগ্রিম টিকিটের জন্য অপেক্ষায় থাকাদের অধিকাংশই ভালো আসন প্রাপ্তির আশায় রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষ‍া করছেন। এমনই একজন দিনাজপুরের হামিদ আলী। তিনি বলেন, ২০ থেকে ৩০ জনের পিছনে পড়লেই আর এসি টিকিট পাওয়া যাবে না। তাই এসি টিকিট পাওয়ার আশায় সন্ধ্যার আগে এসেই লাইনে দাঁড়িয়েছি। মিথুন নামে আরেকজন বলেন, ৪০ থেকে ৫০ জনের পিছনে পড়ে গেলে চেয়ারের সিট পাওয়া ‍যাবে না। তাই আগেভাগে লাইন দিয়েছি।

ভিড় দেখে আনন্দ
ঈদে বাড়িগামী মানুষের ট্রেনের টিকিট কাটার ভিড় দেখতেও কমলাপুরে আসছেন কেউ কেউ। এমনই একজন বাসবোর মুদি দোকানের কর্মচারী রহিম।

তিন বন্ধুর সঙ্গে আসা রহিম বলেন, ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের জন্য রাতেই স্টেশনে ভিড় লেগে যায়। এই ভিড় দেখার মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ আছে। এ জন্যই আমরা বন্ধুরা মিলে এসেছি। তাছাড়া, সকাল থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। সরাদিন দোকানের মধ্যে বসে থেকে একরকম বিরক্তি ধরে যায়। তাই একটু আনন্দের জন্য রাতে ঘোরাঘুরি করি।

ভবঘুরেদের দখলেই স্টেশন
সামনে ঈদ হলেও বরাবরের মতোই কমলাপুর ট্রেন স্টেশনের সর্বত্র ভবঘুরেদের আনাগোনা দেখা যায়। অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হলেও কাউন্টারের সামনের ৫ ভাগের ৪ ভাগ জায়গাই দখলে নিয়ে ঘুমোচ্ছে ভবঘুরেরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
এএসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।