ঢাকা: রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ভেজালবিরোধী গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে বক্তারা খাদ্যে ভেজাল বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই ফ্লোরে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
‘নারীর জয়ে সবার জয়’ ক্যাম্পেইন ফোরামের ঢাকা ইউনিটের আওয়ামী লীগের নারী নেতৃবৃন্দ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘খাদ্যে ভেজাল এবং প্রতিকার’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
এ গোলটেবিল বৈঠকে সংসদ সদস্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জাতীয় পর্যায়ের নারীনেত্রী, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৫০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শিউলি আফসার।
মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহকারী সম্পাদক ঝর্না বাড়ৈ এবং খাদ্যে ভেজালবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহকারী সম্পাদক শারমিন জাহান।
এ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ঘাটতি এবং কার্যকর উদ্যোগের অভাবে এটি মহামারী আকার ধারণ করেছে।
তারা বলেন, এ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী জনমত তৈরি এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ।
বৈঠকে খাদ্যে ভেজাল ও এর প্রতিকারে করণীয় কিছু দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
ক. খাদ্যে ভেজালের কাজে যে সব রাসায়নিক দ্রব্য বা উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তা আমদানির ওপর কঠিন শর্ত আরোপ এবং ব্যবহারিক দিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে এর বিক্রি বন্ধসহ বিক্রিকারীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
খ. কৃষকদের অর্গানিক চাষাবাদের ওপর প্রশিক্ষণ এবং পণ্য সংরক্ষণ ও প্যাকেটজাত করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করা যাবে।
গ. অসাধু ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে। তা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত সিন্ডিকেটকে তাদের নিজেদের ও বৃহত্তর স্বার্থে ভেঙে দিতে হবে।
ঘ. ভেজাল সম্পর্কিত দুর্নীতিকে অবশ্যই ‘না’ বলতে হবে।
ঙ. আঞ্চলিক পর্যায়ে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও তার ব্যবহার সহজলভ্য করতে হবে, যাতে করে কৃষক থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, আড়ৎদার সবাই সহজে ও কম খরচে সে সুবিধা নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সরকারিভাবে যথাসম্ভব সাবসিডি দেওয়া যেতে পারে।
চ. কৃষিজাত পণ্যে ভেজাল মনিটরিং করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি থাকবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল কোর্ট, যাতে যে কোনো সময় বিনানোটিসে বাজারের খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
ছ. ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ১০টি জোনে বিভক্ত করে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যখ প্রশিক্ষিত লোকবল নেই, যা কিনা এই ১০ জোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একইভাবে সারাদেশে এ আইনের বাস্তবায়নে জনবল অপ্রতুল। সুতরাং প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
জ. মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং মিডিয়া এমন বিজ্ঞাপন প্রচার করবে না, যা বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত নয়।
ঝ. ভেজালবিরোধী ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং
ঞ. এ অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধান এবং সামাজিকভাবে এ অপরাধীদের বর্জন করতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম মুক্তা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রফেসর সুলতানা শফি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ অধ্যাপক শারমিন রুমি আলীম, এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ সাংবাদিক নুরুল আমিন প্রভাষ, এটিএন বাংলার অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ রিপোর্টার নাদিরা কিরন, জেদ্দা পারভিন খান রিমি, শারমিন জাহান, ইসমত আরা হ্যাপি, শামিমা চৌধুরী বিথি, পূর্বাণী রায়, জেসমিন আক্তার, ফারাহ দিবা দীপ্তি, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫
বিজ্ঞপ্তি/এবি