ঢাকা: ‘যানজট-জলজট সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার প্রধান যদি টাকার লোভী হন, তাহলে কোনো কাজই ঠিকভাবে হবে না। সাহস করুন কাজ হবেই’।
ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হককে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সে সঙ্গে যানজট নিরসনে যা যা করা দরকার- তার সবই মন্ত্রী করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দেন।
জবাবে মেয়র বলেন, এ মেয়রকে কেউ এখনো ভয় দেখাতে আসেনি।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানী বনানীর একটি হোটেলে আয়োজিত গোলটেবিল সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন মন্ত্রী।
ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে ‘নগর ঢাকায় যানজট: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকার বড় সমস্যা- যানজট, জনজট, জলজট। কোনো সংস্থার প্রধান যদি টাকার লোভী হন, তাহলে কোনো কাজ হবে না। সমস্যা নিরসনে যা যা করা দরকার, আপনাদের সঙ্গে আছি, সবই করবো।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ভাষণে আমি বিশ্বাসী নই। ভাষণ দিতে দিতে আমাদের গোডাউনে আর ভালো কথা নেই।
আনিসুল হককে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী আরও বলেন, যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, সেগুলো থেকে বেঁছে নিয়ে কাজ করুন। মানবিক দিকতো ভাববেন, কিন্তু সব বিষয়ে মানবিকতা দেখলে চলবে না।
তিনি বলেন, প্রথম থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। ২২টি মহাসড়কে ধীরগতির বাহন বন্ধ হয়নি? সবদিক ভেবে, ভয় পেয়ে কাজ করা যায় না। সাহস নিয়ে এগোতে হবে। এখন দুর্ঘটনার হার অনেক কমেছে। হবে না বলি না, তবে কমেছে। অতি গতি, পাশ কাটানোসহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
মন্ত্রী বলেন, ১০ লাখ রিকশা হিসেবে থাকলেও বাস্তবে হয়তো ২০ লাখ। তাহলে মানবিক আর কত দেখবেন। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে পারছেন না, তাহলে রাস্তা দখলমুক্ত করুন। এমন অনেক রাস্তা আছে।
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অনেক ডিম এক ঝুঁড়িতে নয়, এক ঝুঁড়িতে কয়েকটি ডিম আনুন। এভাবেই কাজ এগোতে হবে। কোন নেতা কোন গরুর মার্কেট লিজ নিয়েছেন, সেসব দেখবেন না, সাহস করুন।
তিনি বলেন, অতি বৃষ্টি একটি শিক্ষা দিয়েছে আমাদের। রাস্তা তৈরিতে পার্থক্য থাকায় বৃষ্টির কারণে আমরা সেটা বুঝতে পেরেছি।
আনিসকে মন্ত্রী বলেন, রাস্তার জায়গা কেন দেব না? প্রয়োজনে বিদ্যমান স্ট্রাকচার ভেঙে দেব।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মো. মশিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, হুট করেই রিকশা উঠিয়ে দেওয়া যাবে না। রংপুর ও বিভিন্ন এলাকার মানুষ রিকশা চালান ঢাকায়। তাদের জীবিকার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
আনিসুল হক বলেন, সারা পৃথিবী গবেষণা ও উন্নয়নে প্রচুর টাকা খরচ করে। কিন্তু যানজট সরকারের কাজগুলো সমালোচনায় বদলে দিচ্ছে। আমার দায়িত্ব হল- খুব দ্রুত কিছু করতে হবে। অন্তত ৬ মাসে বা এক বছরে যেন একটি সমাধান দিতে পারি।
সাঈদ খোকন বলেন, যানজট নিরসনের দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। তবু জনগণ যেহেতু আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, আমাদের কাছ থেকে তারা অনেক কিছু আশা করেন। সেক্ষেত্রে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
আলোচনায় তথ্য ও ধারনা উপস্থাপন করেন বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হক, অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন ও স্থপতি তানভীর নেওয়াজ। এ সময় সভায় সরকারের বিভিন্ন কার্যনির্বাহী ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান, বিভিন্ন স্টেক-হোল্ডার, অন্যান্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, সুশীল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খন্দকার গোলাম ফারুক দীর্ঘমেয়াদী ১৩টি সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
এর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে রাস্তার সম্প্রসারণ ও নতুন রাস্তা তৈরি করে রাস্তার ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো, গণপরিবহণের সংখ্যা বাড়ানো ও এসবের রুট কমিয়ে পরিকল্পিত রুট পারমিট দেওয়া কানেক্টিং সড়ক বাড়ানো এবং বড় বড় হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রধান প্রধান অফিস-আদালত রাজধানী থেকে ডি-সেন্ট্রালাইজেশন করা উল্লেখযোগ্য।
এ আলোচনায় যানজট সমস্যার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিক নির্দেশনা দেন আলোচকরা।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউট এ সভার সহযোগী আয়োজক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এসকেএস/বিএস
** ‘যানজট সরকারকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে’
** ‘যানজট নিরসনে একসঙ্গে কাজ করতে চাই’