ময়মনসিংহ: কোরবানির গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিম থাকার কথা থাকলেও ময়মনসিংহের বিভিন্ন পশু হাটে কোনো পশু চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভেটেরিনারি চিকিৎসকের বদলে এসব হাটের ইজারাদাররা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের ওপর ভরসা করছেন।
আর এসব হাটে স্থানীয় প্রশাসনেরও কোনো নজরদারি না থাকায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে মোটা-তাজা গরু।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আমতলা পাগলা বাজার ও তারাকান্দার হইরাগাই পশু হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে হইরাগাই ঈদগাহ মাঠে পশুর হাট বসিয়েছে স্থানীয় হইরাগাই ঈদগাহ দারুল উলুম আবাসিক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এ হাটে মোটা-তাজা গরুর সংখ্যাই বেশি। এসব গরুতে ক্রেতাদের আগ্রহ অবশ্য কম।
এ হাটের এক কোণে বসে কোরবানির পশু বিক্রির হাসিল আদায় করছিলেন জনাপাঁচেক ব্যক্তি। কিন্তু পশু হাটের কোথাও নেই মেডিকেল টিম। হাসিল আদায়ে বসে থাকা সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম (৫০) জানালেন, ভেটেরিনারি চিকিৎসক নন, তাদের প্রধান ভরসা পল্লী চিকিৎসক।
তিনি বলেন, এ হাটে কোনো মেডিকেল টিম নেই। কিন্তু স্থানীয় ৪ থেকে ৫ জন পল্লী চিকিৎসক রয়েছেন। তারা হাট বসার সময়ে এসেছিলেন। তারা হাটে আনা গরুর খোঁজ খবর নিয়েছেন।
এ পল্লী চিকিৎসকরা এখন কোথায়, এ প্রশ্ন করতেই আমতা আমতা করে নিরুত্তুর থাকেন রফিকুল।
পাশেই থাকা একজন তখন উত্তর দিলেন, এ হাটে তো বড় আকারের গরু কম। তাই মেডিকেল টিমের প্রয়োজন পড়ে না। আর পল্লী চিকিৎসকরাও বলেছেন হাটে ভেজাল কোনো গরু নেই।
তারাকান্দার এ পশুর হাটে গরু কেনা-বেচা এখনো পুরোমাত্রায় জমে ওঠেনি। তবে লাভের আশায় অনেক ব্যবসায়ী ওষুধ প্রয়োগ করে গরুকে মোটা-তাজা করেন এমন অভিযোগ উঠেছে। আর ওষুধ প্রয়োগে মোটা-তাজা করা গরুর মাংস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মত দেন চিকিৎসকরা।
এ হাটে বিক্রির জন্য বড় আকারের একটি গরু তুলেছেন মোহাম্মদ শাহজাহান। নিজেকে তিনি গৃহস্থ পরিচয় দেন। এ গরুর তিনি দাম হাঁকছেন ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দরদাম করছেন ৭০ হাজার টাকা। এ বিক্রেতা জানান, এ হাটে পল্লী চিকিৎসকদেরও কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
একই রকম কথা জানান হাটে গরু কিনতে আসা পাশের এক গ্রামের সোহরাব আলী। তিনি বলেন, ‘মোটা-তাজা গরু পরীক্ষা-নিরীক্ষার করা দরকার আছে। পাম বড়ি খাওয়াইয়্যা তো অনেকেই কম সময়ে গরুরে নাদুস-নুদুস করতাছে। কিন্তু চিকিৎসক ছাড়া তো বুঝার উপায় নাই’।
মেডিকেল টিমবিহীন আরেক পশু হাট ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আলালপুর আমতলা পাগলা বাজার। বড় আকারের কিছু গরু এ হাটে উঠলেও কম ক্রেতারাই সেখানে ভিড় করছেন। আবার দাম জিজ্ঞাসা করে অনেক ক্রেতাকে সেখান থেকে দ্রুত সটকে পড়তে দেখা গেলো।
এ হাটে মেডিকেল টিম সম্পর্কে জানতে চাইলে খানিকটা অবাক হলেন সংশ্লিষ্ট ইজারাদার শুকুর আলী। তিনি দাবি করেন, পল্লী চিকিৎসক থাকলেই তো চলে। তারাই গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
এ হাটেই বেশ কয়েকজন মোটা-তাজা গরুর মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারাও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। বলেন, এসব গরু স্বাভাবিক উপায়েই মোটা-তাজা করা হয়েছে। তারা উল্টো পশু চিকিৎসক ডেকে এনে পরীক্ষা করার কথা বলেন।
কিন্তু হাটে তো মেডিকেল টিম থাকার কথা, নেই কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে সুরুজ মিয়া নামের একজন বললেন, ‘গরুরে মেডিসিন খাওয়াইলো তো মেডিকেল মিট ভেজাল পাইবো, আমরা তো এমন কিছু করি না’!
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শরাফত জামান দাবি করেন, প্রতি হাটে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে ৩ সদস্যের মেডিকেল টিম থাকবে। প্রতি উপজেলায় মাত্র একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক থাকায় ভেটেরিনারি ফিল্ড সহকারী ও স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৫
এএসআর