ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মিনা ট্রাজেডি

‘দশ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি’

এ জেড খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
‘দশ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি’ ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘আমি সুস্থ আছি। তোমরা কেমন আছো? আমি শয়তান স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করতে যাচ্ছি।

’ কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে বাবা বললেন, ‘একটু রাখো। আমি দশ মিনিট পরে ফোন দিচ্ছি। ’
 
এই বলে বাবা ফোন রাখলেন। এরপর তিন দিন হয়ে গেল, বাবার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন সৌদি আরবের মিনার ঘটনায় নিখোঁজ হাজি মো. মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে মো. মোবিনুর রহমান।
 
শনিবার (২৬ সেপ্টম্বর) রাজধানীর সবুজবাগ থানার দক্ষিণ রাজারবাগ এলাকায় মোবিনুর রহমানের বাসায় বসে কথা হচ্ছিলো তার সাথে।  

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাবার সঙ্গে শেষ কথা হয়। বাবা এক মিনিট কথা বলে বললেন, ফোন রাখো। আমি দশ মিনিট পরে ফোন দিচ্ছি। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও বাবা আর ফোন দেননি। আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করে বাবার মোবাইল নম্বরটা বন্ধ পাই। এরপর মোয়াল্লেমের (গাইড) সাহায্যে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও কোথাও তার সন্ধান পাইনি। মা’র সন্ধান পেয়েছি। তিনি হাসপাতালে আছেন। এখন কিছুটা সুস্থ। কিছুক্ষণ পর পর অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন মা।
 
মিনার দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই মোবিন তার বাবার খবর নিতে মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে চেষ্টা চালাতে থাকেন।
 
তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আনন্দের বদলে পরিবারে বিষাদ নেমে এসেছে। ভাই-বোনরা কান্নাকাটি করছেন। উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগে কাটছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত। শেষ পর্যন্ত দুঃসংবাদকেই বরণ করতে হয় কি’না সেই আতঙ্কে।
 
মোবিন বলেন, আমার বাবা মুজিবুর রহমান (৬০) ও মা তহুরা রহমান (৫৬) এয়ারওয়ে ট্রাভেলার্স এজেন্সির মাধ্যমে গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার ফ্লাইটে হজের জন্য সৌদি আরব রওনা দেন। এরপর নিয়মিত তাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগযোগ হতো। মিনার দুর্ঘটনার আগের রাতেও বাবা-মা’র সঙ্গে পরিবারের সবার কথা হয়েছে। ওই দিন বাবা জানান, দীর্ঘ জার্নি করে মুজদালিফা থেকে মিনায় গিয়েছেন। শরীরটা একটু খারাপ। তাই মিনায় শয়তান স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করতে যাবেন না। মোয়াল্লেমকে (গাইড) দিয়ে তাদের পক্ষে পাথর নিক্ষেপের কাজ সম্পন্ন করাবেন। তখন আমি বললাম, আপনাদের যেভাবে ভালো হয়, সেভাবে করেন। এরপর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বিভিন্নভাবে বাবার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। মক্কা, রিয়াদ, জেদ্দার সব হাসপাতালে খোঁজ করেও কোনো তথ্য পাইনি। সৌদি আরবের যে হটলাইন দেওয়া আছে, তাতে হাজার হাজার বার ফোন করেছি, কোনো তথ্য জানাতে পারেনি। সব শেষে মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছি।

বাবা-মা’র একটি ছবি দেখিয়ে মোবিন বলেন, বাবা নিখোঁজ আর মা হাসপাতালে। এ অবস্থায় সাহায্য করার মতো সৌদি আরবে আমাদের কেউ নেই। সরকার ‍যদি সুযোগ দেয় তাহলে আমি নিজেই যাবো বাবা-মাকে উদ্ধারের জন্য।

তিনি আরও জানান, তাদের একই এলাকা থেকে ১০ জন একসঙ্গে হজে গিয়েছেন। এর মধ্যে তার বাবাসহ দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৫ জন আহত হয়েছেন।
 
গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের মিনায় ‘শয়তান স্তম্ভে’ পাথর ছোড়ার সময় পদদলিত হয়ে দেশটির সরকারি হিসাব মতে ৭১৯ জন হাজি নিহত হন। আহত ও নিখোঁজ আছেন আরও অনেক।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৫
এজেডকে/আরএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।