ঢাকা: ‘যান তো বিরক্ত কইরেন না, একটু নিরিবিলি থাকতে দেন। আপনারা এত যন্ত্রণা দেন কেন?’
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এভঅবেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাসের এক বয়োবৃদ্ধ।
যে বয়সে তার ছেলে-মেয়ে সঙ্গে থাকার কথা, নাতি-নাতনিদের গল্প শুনিয়ে মাতিয়ে রাখার কথা সেই বয়সে একাকীত্ব সময় কাটছে এই প্রবীণ নিবাসে।
শুধু কী তাই? ঈদ কিংবা উৎসবে পরিবার-পরিজনের সান্নিধ্যে থেকে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার কথা, সেখানে ঈদের দিনটি কাটছে নিতান্তই নিঃসঙ্গতায়।
তার মতো বিষাদগ্রস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ‘ভালো’ ব্যবহার আশা করাও কঠিন!
যেখানে ঔরসের সন্তানই কোনো খোঁজ-খবর নেয় না, সেখানে বিশেষ কোনো দিনে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতি যেন তাদের ছাইচাপা কষ্টকে আরও জ্বেলে দেয়।
প্রবীণ নিবাসের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে কুশল বিনিময় ও ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে গেলেও বিরক্তি বোধ করছেন তারা। বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই কারও সঙ্গে কথা বলার।
কেউ ভদ্রচোতি ব্যস্ততার অজুহাত দিচ্ছেন, অনেকেই অন্যজনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। কেউ বা কথা বললেও ঢেকে রাখার চেষ্টা করছেন পরিবারের গল্প।
মো. আবু সাদেক, একমাস ধরে আছেন প্রবীণ নিবাসে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে বড় করেছেন। নিজেও ছিলেন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। অবসর নিয়েছেন তাই তার স্থান হয়েছে এখানে।
জানালেন, ঈদের দিনটিতে ছেলে-মেয়ে ছাড়া এই ঘরে একাকীত্ব সময় কাটছে না। খুব পরিবার-পরিজনদের কাছে পেতে মন চায় তার।
দীর্ঘ সময় কথা বললেও একটিবারও পরিবারের সদস্য কিংবা ছেলে-মেয়ের সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বললেন না। বরং তাদের প্রসঙ্গহ আসতেই বলেছেন,‘তারা ভালো থাকুক, সুখে থাকুক। সব সময় এটাই কামনা করি। ’
শুধু আবু সাদেকই নন, তার মতো আরও অনেকেই প্রবীণ নিবাসে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন, যাদের বুকের ভেতর চেপে রেখেছেন কষ্টের পাথর!
অনেকে সন্তানদের সম্মানহানি হয়, এমন আশঙ্কায় নিজের পরিচয় পর্যন্ত আড়াল করে রাখছেন।
নাম ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধা জানালেন, গত চার বছর ধরে এখানে আছেন তিনি। মাঝে মাঝে সন্তানদের খুব দেখতে মন চায়। কিন্তু কেউ তাকে দেখতে আসে না।
প্রবীণ নিবাসের কর্মকর্তারা জানান, ঈদ উপলক্ষে এখানকার বাসিন্দার সকালে নাস্তা দেওয়া হয়েছে সেমাই পরোটা। আর দুপুরে মাংসসহ উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়।
তবে এসবের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই স্বজনদের থেকে দূরে থাকা এসব মানুষদের। তাদের শুধু একটাই চাওয়া, ‘পরিবারের কেউ যেন এসে অন্তত দেখা করে যায়। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
এইচআর/এমএ