ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জ্যেষ্ঠ নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা

এস এম আববাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
জ্যেষ্ঠ নাগরিকের সুবিধা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা

ঢাকা: ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া দেশের জ্যেষ্ঠ/প্রবীণ নাগরিকদের সরকার ঘোষিত সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য, রেল এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় প্রবীণদের যাতায়াত, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে সরকারের পক্ষে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।


 
জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার আলোকে প্রবীণদের অধিকার ও সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
 
সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদফতর, দফতর, পরিদফতর ও সংস্থায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেবে।
 
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে সিনিয়র সিটিজেনদের সুযোগ-সুবিধা দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ দফতর, অধিদফতর বা সংস্থা তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেবে।
 
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নিরঞ্জন দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয়গুলোকে আমরা চিঠি দিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে।
 
দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণদের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। তবে এ ঘোষণার পর ষাট বছর ও ষাটোর্ধ্ব নাগরিকরা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। যদিও আগে থেকেই বয়স্কভাতা চালু রেখেছে সরকার।
 
স্বীকৃতির পাশাপাশি প্রবীণব্যক্তিকে তার অবদানের জন্য সমাজের বৈষম্যহীন, নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দেবে রাষ্ট্র। সরকার এই নিশ্চয়তা প্রদানের ব্যবস্থা করবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা সম্পদ, মর্যাদা, লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রবীণদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
 
প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা
‌নীতিমালায় বলা হয়, প্রবীণদের সুবিধার্থে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিজ নিজ দফতর, অধিদফতর বা সংস্থার মাধ্যমে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে দেশের সব ধরনের টার্মিনাল, স্ট্যান্ড, হাসপাতাল এবং সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠান ও ভবনের প্রবেশে ঢালুপথের ব্যবস্থা করা; শহরের প্রতিটি ফুটপাত ও উঁচু রাস্তার শেষপ্রান্ত ঢালু রাখা; বিমান, বাস, লঞ্চ, রেল, স্টিমার, মনোরেল ও মেট্রোরেলে প্রবীণ ব্যক্তিদের আসন সংরক্ষণ এবং বিশেষ ছাড়ে স্বল্পমূল্যে টিকেট প্রদানের ব্যবস্থাসহ আলাদা টিকেট কাউন্টারের ব্যবস্থাও করবে।
 
এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণসহ প্রবীণদের জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৫ শতাংশ সিট বরাদ্দ রাখা, আলাদা কাউন্টার রাখার ব্যবস্থা এবং স্বল্প বা বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ রাখার ব্যবস্থা করবে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।  
 
নীতিমালায় বলা হয়, প্রবীণদের জন্য সরকার দিবাকেন্দ্র স্থাপন করবে। আর তারা মারা যাওয়ার পর সরকারিভাবেই তাদের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হবে। প্রবীণদের জীবন-জীবিকার জন্য পল্লী ও শহর এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্প গ্রহণও করা হবে।
 
দরিদ্র প্রবীণদের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা, সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কার্যক্রম উৎসাহিত করতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া প্রবীনদের কর্মসংস্থানের জন্য সহজ-শর্তে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে প্রতিষ্ঠানগুলো।
 
স্বাস্থ্য, রেল এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পরিবার ও সমাজে প্রবীণরা যেন অবজ্ঞা, অবহেলা, বৈষশ্যের শিকার না হন, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে। আর সমাজের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করবে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব সুযোগ-সুবিধা বাস্তবায়ন করা হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণদের মধ্যে অবদান রাখার স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তাদের ভবিষ্যত জীবন সুন্দর করার উদ্যোগ নেন অনেক আগেই। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণলায় জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা তৈরি করে।

২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর ৬০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতির বিধান রেখে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়, ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি।
 
এ নীতিমালায় প্রবীণ নাগরকিদের স্বীকৃতি হিসেবে পরিচয়পত্র দেওয়ার বিধান রাখা হয়। তবে অনেক দিনেও তা শেষ করা যায়নি নানা জটিলতায়। জাতীয় পরিচয়পত্রটি পিংক কালারের (গোলাপি রঙের) করে তাতে মনোগ্রাম ও ‘সিনিয়র সিটিজেন’ লিখে সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে।

ইসি সচিবালয় থেকে বার বারই বিষয়টি নাকচ করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত সারসংক্ষেপের পর ইসি থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে বিষয়টির সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
 
আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস
আগামী ১ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এবারও সারাদেশে উদযাপন করা হবে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
এসএমএ/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।