ঢাকা: একে তো বিরূপ আবহাওয়া তারপর অসহনীয় যানজটের ভোগন্তিতে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন শেকড়ের টানে বাড়ি ফেরত মানুষেরা।
কিন্তু নাড়িপোতা ভিটেয় পৌঁছে প্রিয়জনের মুখ দেখার পর মুহূর্তেই কর্পুরের মতো উবে গেছে পথের সব ভোগান্তি আর ক্লান্তি।
জন্মভূমিতে ক’টাদিন আপনজনের সান্নিধ্যে আনন্দ উপভোগ শেষে ফের সেইসব মানুষ ফিরছেন কর্মস্থলে।
ধূলো-ধোয়াঁর প্রিয় তিলোত্তমা নগরীতে। তবে ফিরতি পথে বাড়তি ভাড়া গোনা ছাড়া একেবারেই নির্বিঘ্ন ছিল তাদের যাত্রা।
তাই ঢাকায় ফিরে গাড়ি থেকে নামার পরও তাদের চোখে মুখে ছিল আনন্দর রেশ। ছিল প্রিয়জনদের ফেলে আসা কিছু অব্যক্ত কষ্টও!
রাজধানীর পশ্চিমে দেশের সবচেয়ে বড় আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলী।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল আর উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলা থেকেই বাসে করে এসে এই টার্মিনালে নামছেন রাজধানী ফেরত কর্মমুখী মানুষেরা।
ঈদের ছুটি শেষ রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) অফিস শুরু হওয়ায়, শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত থেকেই ঢাকা ফেরা মানুষের আনাগোনা শুরু হয়।
তবে তা বাড়তে থাকে রোববার সকাল থেকে; যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সোমবার এ চাপ ছিল আরও বেশি।
তবে একসঙ্গে রাজধানী এতো মানুষের পথে কোনো বিড়ম্বনা কিংবা ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি বলেই জানালেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখেও গাড়ির তেমন জট দেখা যায়নি। স্বাভঅবিক ছিল ফেরিঘাটও।
ঈদে বাড়ি যাওয়া উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের কাছে আতঙ্ক তৈরি করলেও সোমবারেএবশ স্বাভাবিক ছিল সাভারের নবীনগর- চন্দ্রা মহাসড়ক।
সাভারের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পর্যন্ত মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকলে এখন পর্যন্ত যানজটের কোনো খবর যাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে ঢাকা ফিরেছেন তৌহিদ আলম। সঙ্গে স্ত্রী রুমানা ও তিন বছরের মেয়ে ঐশী। ভোর ৬টায় রওনা দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় গাবতলী চলে এসেছেন তিনি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তৌহিদ বাংলানিউজকে বলেন,‘ফেরাটা পুরোপুরি নির্বিঘ্নই হয়েছে। বলতে পারেন, ঈদের আনন্দের পুরো রেশ নিয়েই ঢাকা ফিরেছি আমরা। তাই যাওয়ার পথে বাসের জন্য ৮ঘণ্টা বসে থাকার যন্ত্রনা এখন আর মনে হচ্ছেনা একটুও। ’
বেলা ৩টার দিকে গাবতলীতে এসেছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রামের অনম রায়হান। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন তিনি।
জানালেন, ঢাকা ফেরার সময় বলতে গেলে একদমই মসৃণ। কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই আসতে পেরেছি। হাইওয়ে রেস্তোরাঁ ছাড়া বাসটি কোথায় এক মিনিটের জন্যও ব্রেক করেনি।
‘যাওয়ার সময় ২১ঘণ্টায় বাড়ি পৌঁছালেও, ফিরতে সময় লেগেছে মাত্র ৭ ঘণ্টা,’ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন তিনি।
এদিকে পথে কোনো দুর্ভোগের মধ্যে না পড়লেও বরাবরের মতো বাস কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।
বাগেরহাট থেকে আসা মুকুল অভিযোগ করেন, গোল্ডেন লাইন বাসে তিনি ঢাকা ফিরেছেন। বাগেরহাট থেকে ঢাকার বাস ভাড়া সাড়ে ৫শ’ টাকা হলেও তার কাছ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা নেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাস কোম্পানির পক্ষ থেকে গাবতলি কাউন্টারের রফিক বলেন, ‘এখন ঢাকা থেকে বাগেরহাট যাওয়া গাড়িগুলো প্রায় ফাঁকা যাচ্ছে। ফলে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে বাড়তি ভাড়া নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ’
তবে সোমবার দিনগত রাত থেকে রাস্তার সু-শৃঙ্খল এই পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, অনেকেই ঈদের ছুটির সাথে ২/৩দিন ছুটি নিয়েছেন। তারা আজ রাত থেকেই ফিরতে শুরু করবেন। তখন যাত্রী ও গাড়ির চাপ বাড়বে মহাসড়ক এবং ফেরি ঘাটে।
তখন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকলে যাত্রীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
আরএম/এমএ