ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এসে দাঁড়ালো একটি মাইক্রোবাস। তখন সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই।
তাদের বিলাপে ভারী হয়ে উঠে মর্গের আঙিনা। স্ত্রী রীণা সরকারের গগণবিদারী কান্না উপস্থিত অনেক মানুষকেই কাঁদিয়েছে।
গাড়িতে বসেই ভাগ্নী শেলীকে ধরে বিলাপ করে তিনি বলছিলেন, ‘তোমার মামারে কোথায় রাখছো? ও কী জীবিত আছে’? এ সময় মাথা নাড়িয়ে না বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন শেলী।
শুনেই চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে রীণা সরকারের বুকফাটা আর্তনাদ, ‘আমি গাড়ি থেকে নামুম না। ওর মুখ ক্যামনে দেখুম। ওরে ছাড়া কীভাবে বাঁচুম? আমারে ফালাইয়া কই গেলা?’
পরে গাড়ি থেকে নেমে মর্গের ভেতরে যান রীণা সরকার, তার ছোট ছেলে হৃদয় (৯), দুই মেয়ে সুস্মিতা সরকার (২৩) ও বিন্দু সরকার (১৫)। তারাও ঢুকরে কাঁদছিলো। লাশঘরের চেয়ারে বসে ছোট্ট হৃদয়ের কান্না থামছেই না। কেঁদে কেঁদে বলছে, ‘আমার বাবা কই, বাবারে এনে দাও। ’
যুগ্ম-সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক রণজিৎ চন্দ্র সরকারের ভাগ্নে কবিরঞ্জন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, অসম্ভব মা ভক্ত ছিলেন মামা। ঈদের ছুটিতে বৃদ্ধা মা’র কাছে ছুটে এসেছিলেন। যে দু’রাত থেকেছেন মাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমিয়েছেন। যাবার সময় মা’র কাছ থেকে বিদায় নিতে এসে কেঁদেছেন।
![](files/September2015/September28/Sochib1_557415940.jpg)
রণজিৎ চন্দ্র সরকারের স্ত্রী ও সন্তানরা ঢাকা থেকে হাসপাতালে আসার আগেই সেখানে এসে ভিড় করেন তার স্বজনরা। এ সময় তার ভাগ্নী শেলী চিঁকার করে কাঁদতে কাঁদতে তার এক ভাইকে বলতে থাকেন, ‘মামাকে মর্গে এভাবে কেন দেখলাম? আমি সহ্য করতে পারছি না। মামী, হৃদয়রা কিভাবে সহ্য করবে?’
শেলীর ভাই তখন অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যান রণজিৎ সরকারের মরদেহের কাছে।
মর্গের সামনে বিকেল থেকেই ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন এনডিসি বিভীষণ কান্তি দাস ও ম্যাজিস্ট্রেট জেবুন নাহার শাম্মী। এনডিসি বিভীষণ কান্তি দাস বাংলানিউজকে বলেন, যুগ্ম-সচিবের মরদেহ তার স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা মরদেহ নিয়ে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জের বাকরপুর গ্রামে যাত্রা করেছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যাত্রা করেন রণজিৎ চন্দ্র সরকার। পরে ট্রেনটি ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে তিনি ট্রেন থেকে নামেন। চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে তার বাম পা ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
আরএম
** চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে ছিটকে পড়েন যুগ্ম সচিব
** ট্রেনে কাটা পড়ে যুগ্ম সচিবের মৃত্যু