পটুয়াখালী: দীর্ঘ একযুগ পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় বৃদ্ধি করলো সরকার। নিরাপদে মা ইলিশের বিচরণ এবং অধিকতর ফলপ্রসূ ফলাফলের আশায় ১১ দিনের পরিবর্তে নিষেধাজ্ঞার সময় এ বছর থেকে ১৫ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু এ সময়ে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের অবাধ বিচরণ ঠেকানো না গেলে ইলিশ রক্ষা করা আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উপকূলের জেলেরা। তাই ভালো ফলাফলের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করে নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণে যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের।
পটুয়াখালীর খেপুপাড়া মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক বাংলানিউজকে জানান, দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিকটন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। দেশের সামগ্রিক ইলিশ উৎপাদনের ৬৭ ভাগই সমুদ্র থেকে আসে। বাকি ৩৩ ভাগ বিভিন্ন নদনদী থেকে আসে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় এক শতাংশ।
![](files/September2015/September29/patuakhali_elise_pic_4_863853223.jpg)
তিনি জানান, ইলিশের প্রজনন সাধারণত সারা বছরই চলতে থাকে। তবে, আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরের সময়টাকে মা ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন সময় নির্ধারণ করেছে গবেষকরা। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর গবেষণা করে ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রথম বারের মতো ইলিশ প্রজননের জন্য ১১ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।
তার মতে, আগের ওই ১১ দিন নিষেধাজ্ঞার পরে এবং আগে প্রচুর পরিমাণ মা ইলিশ জেলেদের জালে আটকা পরায় এ বছর অধিক ইলিশ প্রজননের আশায় সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করে মোট ১৫দিন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। এ সময় মা ইলিশ সাগরের লোনা পানি থেকে মিঠা পানিতে ছুটে আসে ডিম ছাড়ার জন্য। ডিম ছাড়ার পর আবার লোনা পানিতে চলে যায়। এ আসা-যাওয়ার সময়ে ইলিশের অবাধ বিচরণ দরকার। আর এ কারণেই এই সময় ইলিশ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
নতুন করে সময় নির্ধারণে আগামী ইলিশ মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিক ইলিশ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি।
![](files/September2015/September29/patuakhali_elise_pic_1_754159018.jpg)
এদিকে, নিষিদ্ধ সময়ে বাংলাদেশি জেলেরা ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকলেও পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা অবাধে ইলিশ শিকারে ব্যস্ত থাকে। এ সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় টহলে থাকেনা বলে অভিযোগ কুয়াকাটা, আলীপুর, মহিপুর, সোনারচর, রাঙ্গাবালীসহ উপকূলীয় এলাকার জেলেদের।
আলীপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, নিষিদ্ধ সময়ে যদি অন্য দেশের জেলেদের দেশীয় জলসীমায় অবাধ বিচরণ বন্ধের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে ইলিশ রক্ষায় সরকারের সব পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে।
একই অভিযোগ মহিপুর ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন গাজীর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক একটি ট্রলার সাগরে গিয়ে খালী হাতে ফিরে আসে। দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয় এতে। অথচ যেসব স্থানে ইলিশের দেখা মেলে সেসব স্থানে এদেশীয় ট্রলার প্রবেশ করতে পারেনা ভারতীয় ট্রলারের অবাধ প্রবেশের কারণে।
![](files/Hilsha_15151_968243608.jpg)
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পটুয়াখালী কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের ডেপুটি কমান্ড্যান্ট জেএমএইচ ক্বামীল আলম বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশের জলসীমায় যেকোন ধরনের প্রবেশ ঠেকাতে কোস্টগার্ড সব সময় সতর্ক অবস্থায় আছে। অন্য দেশের কোনো ট্রলার ইলিশ শিকার করে তবে তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল হাছানাত বাংলানিউজকে জানান, পার্শ্ববর্তী দেশকে সম্পৃক্ত করে আঞ্চলিক ভিত্তিতে যেকোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া যেতো। তাছাড়া, মা ইলিশ রক্ষার পদক্ষেপও অধিকতর ফলপ্রসূ হতো।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
এমজেড