ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

চলনবিলে দেশীয় মাছের শুটকি উৎপাদনের ধুম

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
চলনবিলে দেশীয় মাছের শুটকি উৎপাদনের ধুম ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিরাজগঞ্জ: মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলন বিলে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শুরু হয়েছে দেশীয় জাতের মাছের শুটকি উৎপাদন প্রক্রিয়া।

শুটকি উৎপাদনের লক্ষে এ অঞ্চলের শত শত শুটকি চাঁতালে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।



সিরাজগঞ্জ-পাবনা-নাটোর ও নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত চলন বিল। বর্ষা মৌসুমে কানায় কানায় ভরে ওঠে দেশের বৃহত্তম এ বিল ও আশপাশের সব জলাশয়। এ সময়ে সংযুক্ত সব নদ-নদীগুলো থেকে আসা বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ ধরা পড়ে এ বিলে।

বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে পানি কমে কমতে শুরু করলেই বিল ও আশপাশের খাল-জলাশয়ে জেলেদের মাছ ধরার হিড়িক পড়ে যায়। এসব মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের পাশাপাশি চলে শুটকি উৎপাদনের ধুম।

জানা গেছে, চলন বিলের সিরাজগঞ্জে তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহাজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় তিন শতাধিক শুটকির চাঁতাল এ বছর চলছে শুটকি শুকানো।

এসব চাঁতালে দেশীয় প্রজাতির টেংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চেলা, মলা, টাকি, বাইম, শোল, গুতম, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কৈ, নন্দই, বেলেসহ নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছের শুটকি করা হচ্ছে।

সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এ অঞ্চলের শুটকি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাছের আড়তের আশপাশে চাঁতাল তৈরি করে এসব শুটকি উৎপাদন করেন। প্রতি চাঁতালে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। এদের মধ্যে ‍অবশ্য সংখ্যায় নারী শ্রমিক বেশি।

এবার প্রায় তিন শতাধিক চাঁতালে তৈরি শুটকি এলাকার চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার সেকেন্দারপুর গ্রামের দেলবার হোসেন, নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার মাঠনগর গ্রামের জাহিদুল ও সিংড়া থানার শাপগাড়ী গ্রামের নান্নুসহ  কয়েকজন শুটকি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা  মৌসুমে চলন বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পরে। সকালে কিংবা বিকেলে এসব মাছ স্থানীয় আড়ত থেকে কিনে আনেন তারা। পরে চাঁতালে নিয়ে শুকিয়ে শুটকি করেন।

তারা জানান, প্রতিমণ কাঁচা মাছ ৭শ’ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে কেনা হয়। পরে প্রতি ৩ কেজি কাঁচা মাছ থেকে ১ কেজি শুটকি তৈরি করা হয়। এসব শুটকি মাছ প্রকারভেদে ২ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার মণ দরে পাইকারি বিক্রি করেন তারা।

শুটকি ব্যবসায়ীরা জানান, শুটকি তৈরি শুরুর পর তা বাজারজাত করতে প্রায় মাসখানেক সময় লাগে। প্রথমে শুটকি তৈরি করে তা প্যাকেটজাত করতে হয়। এরপর শুষ্ক  মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়।   তবে কেউ কেউ চাঁতালে উৎপাদন শেষে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে চাঁতাল থেকেই শুটকি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন।

তাড়াশের বি-পাচান গ্রামের আফজাল হোসেন, নওগাঁ গ্রামের শামছুল, চৌপাকিয়া গ্রামের আবুল হোসেনসহ কয়েক জেলে জানান, শুকনো মৌসুমে তারা ক্ষেতে-খামারে মজুর খেটে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকায় রাতভর খড়া জাল দিয়ে চলন বিল থেকে মাছ শিকার করেন।

‍তারা জানান, অনেকে মাছ শিকারের পর আড়তে বিক্রি করেন। তবে মাছের যোগান বেশি থাকায় আড়তে দাম কম।   এজন্য তারা মাছগুলো শুটকির চাঁতালে বিক্রি করেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরেন্দ্রনাথ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, চলন বিলে এ মৌসুমে শুটকি উৎপাদনের ধুম পড়ে।

গত বছর শুধু তাড়াশ উপজেলাতেই ১১ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয়। এ বছর আরো বেশি শুটকি উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।