ঢাকা: রাত প্রায় দেড়টা। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের রেলক্রসিংয়ের পাশে একটি টি স্টলে বসা এক ক্রেতা।
রাত ১০টা থেকে সকাল পর্যন্ত এ দোকান চালান বেলী। মধ্যরাতে একজন নারী হিসেবে মহাসড়কের পাশে একা দোকান পরিচালনায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় বেলীকে। কিন্তু পেটের দায়ে আর দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সব চড়াই উৎরাই হাসিমুখেই পার করেন তিনি।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দিনগত মধ্যরাতে বেলীর চায়ের দোকানে বসেই বাংলানিউজ আলাপ করে তার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘দোকানে ইনকাম খারাপ না আপা। কিন্তু এরে চান্দা দিতে হয়, ওরে বকসিশ দিতে হয়। আর অনেকেই খেয়ে টাকা না দিয়া চইলা যায়। কী করমু। মাইয়া মানুষ। চুপ কইরা থাকি। ভাবি এই দোকানের টাকা দিয়াইতো পোলাপান দুইটারে মানুষ করতে হইব। ’
![](files/September2015/September29/bissho_road_tea_stall_659426131.jpg)
বেলী এক মেয়ে এক ছেলের মা। মেয়ে রিয়া মনির বয়স ৩ বছর, আর ছেলে হৃদয়ের ১০ বছর। হৃদয় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বড় হয়ে ছেলে বিসিএস ক্যাডার হবে, এটাই বেলীর স্বপ্ন। বলেন, ‘আমি চাই পোলাডারে মানুষের মতো মানুষ করতে। বড় সরকারি চাকরি করবো। আমার দিন ফিরবো। সন্তানদের জন্য আমি সব কষ্ট করতে রাজি। ’
চায়ের দোকানটিতে সারারাত কাজ করেন বেলী নিজে। আর দিনে কাজ করেন স্বামী। বলেন, ‘আপা দিনে ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনা করতে হয়। তারপর ঘরের কাজতো আছে। সবাই যখন ঘুমায়া যায়, তখন আমি দোকান চালাই। আমি চাই না এক মিনিটও আমার দোকান বন্ধ থাকুক। ’
![](files/September2015/September29/bissho_road_tea_stall__4__638879688.jpg)
ছোট বেলা থেকেই যুদ্ধ করে বড় হয়েছেন বেলী। বগুড়ার ছোট্ট গ্রামে জন্ম তার। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে সবার ছোট বেলী। শিক্ষার্থী হিসেবেও খারাপ ছিলেন না। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাতে পঞ্চম শ্রেণির গন্ডি না পেরোতেই পড়ালেখার দ্বার বন্ধ হয়ে যায় তার। পাড়ি জমান ঢাকা শহরে। কাজ নেন গার্মেন্টসে। সেই থেকে নগরীতে পথচলা শুরু।
তবে বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন বেলী। কিন্তু সন্তানদের বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার কাজ করার চিন্তা আসে বেলীর। শুরু করেন চায়ের দোকান। এখন বেলীর চায়ের দোকানের আয়েই তার সংসার চলে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
ইউএম/এইচএ/