ময়মনসিংহ: ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে চেনা জানা জগত ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক যুগ্ম সচিব রণজিৎ চন্দ্র সরকার। মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শে থেমে গেলো তার জীবনের স্পন্দন।
এ করুণ মৃত্যু নিয়ে শোকাহত আঙুলের ফাঁকে বেদনার্ত অনুভূতির মিশেলে শোকগাঁথা ছড়িয়ে পড়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। শোকস্তব্ধ এসব মানুষের ভাষাও শোকাহত। আচমকা এ মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হৃদয়ে তারা প্রকাশ করেছেন বেদনার্ত অনুভূতি।
চলতি বছরের ২২ আগস্ট ময়মনসিংহের উন্নয়ন ভাবনা নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে এসেছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই সময়কার যুগ্ম-সচিব রণজিৎ চন্দ্র সরকার। প্রায় ডজনখানেক অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিবদের সঙ্গে সেদিন মঞ্চে বসেছিলেন ভাল মনের এ মানুষ।
রণজিৎ চন্দ্র এক সময় ছিলেন ময়মনসিংহের আরডিসি। মৃত্যুর প্রায় এক মাস আগের সেই অনুষ্ঠানের স্মৃতি, আর মৃত্যুর পর ২৮ সেপ্টেম্বর দেখা এ যুগ্ম-সচিবের নিথর দেহের বেদনার্ত অনুভূতি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছেন ময়মনসিংহের এনডিসি বিভীষণ কান্তি দাস।
বাংলানিউজে প্রকাশিত ‘আমি ওরে দেখমু কেমনে’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি শেয়ার দিয়ে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে এ স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যু কত সহজ! প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার আগে মায়ের কাছে ছুটে এসেছিলেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের সন্তান যুগ্ম সচিব রণজিৎ স্যার। ’
‘ফেরার পথে যাত্রাবিরতিতে ট্রেন থেকে নেমে পুনরায় উঠার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। ভদ্র, সজ্জন মানুষটি একসময় ময়মনসিংহের আরডিসি ছিলেন। তাই স্যার সম্পর্কে প্রথম স্টাফদের কাছ থেকেই শুনেছিলাম। ’
গত ২২ আগস্ট সরকারের উন্নয়ন ভাবনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এলে সার্কিট হাউজে স্যারের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। আর আজকে দ্বিতীয়বার, মৃত্যুর পরে। ’
এ স্ট্যাটাসে ফারুক খান পাঠান নামের একজন লিখেছেন, ‘উনি ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ছিলেন। উনি স্বর্গ বাসীহোন। ’ আক্ষেপ করে আবু সাইয়েদ রয়েলের মন্তব্য, ‘কত সহজেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। ’
এনডিসি বিভীষণ কান্তি দাসের সঙ্গে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত রণজিৎ চন্দ্র সরকারের স্ত্রী ও তিন সন্তানের জন্য সোমবার বিকেল থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট জেবুন নাহার শাম্মী। সদালাপী ও সজ্জন এ মানুষটির হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত প্রস্থানে নিজের অনুভবের কথা তুলে ধরেছেন ফেসবুকে।
সেখানে জেবুন নাহার শাম্মী লেখেন, ‘প্রতিটি আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই স্বাভাবিক বিষয়টাকে খুব সহজে গ্রহণ করা এতোটা সহজ বা স্বাভাবিক নয়। একজন মানুষের মৃত্যু হয় তো গোটা পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। যিনি মৃত্যুবরণ করলেন তিনি জানতেও পারলেন না তার মৃত্যুতে তার পরিবার কী যন্ত্রণা ভোগ করছেন বা করবেন!’
দুঃখ ভারাক্রান্ত এ ম্যাজিস্ট্রেট স্ট্যাটাসের শেষভাগে আরও বলেন, ‘যুগ্ম-সচিব রণজিৎ স্যারের মৃত্যুতে তার পরিবার যেন এমন কোনো যন্ত্রণার সম্মুখীন না হন। সৃষ্টিকর্তা যেন তাদের এই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দেন। স্যারের বিদেহী আত্মা যেন শান্তিতে থাকেন। ’
‘স্যারের মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। নীরব, নিস্তব্ধ এক সুন্দর মুখশ্রী। তাকে দেখতে আসা প্রতিটা মানুষের মুখে শুধু একটা কথাই ছিলো, খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ভালো মানুষগুলোই বুঝি খুব দ্রুত চলে যায়? কেন জানি না স্যারের এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছিনা। ’
‘একবার মাত্র উনার সঙ্গে দেখা হয়েছে ২২ আগস্ট। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার উন্নয়ন বিষয়ক সমন্বয় সভায়। ওটাই প্রথম ওটাই শেষ। স্যার আপনি যেখানেই থাকুন, দোয়া করি ভালো থাকবেন। আপনার আশীর্বাদ সব সময় আপনার সুস্মিতাদের মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকবে। ’
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে যাত্রা করেন রণজিৎ চন্দ্র সরকার। পরে ট্রেনটি ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করলে তিনি ট্রেন থেকে নেমে ফ্রেশ হন। এরপর চলন্ত ট্রেনে আবারও উঠতে গিয়ে তার বাম পা ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
এইচএ/
** ট্রেনে কাটা পড়ে যুগ্ম সচিবের মৃত্যু
** চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে ছিটকে পড়েন যুগ্ম সচিব
** ‘আমি ওরে দেখমু ক্যামনে’