ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

দাবি গোছাচ্ছে দলিতরা

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
দাবি গোছাচ্ছে দলিতরা ছবি: সোহাগ / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কেউ বলে ‘মেথর’, কেউ ইংরেজিতে বলে ‘সুইপার’। কাছে ঘেঁষতে দেন না তাদের।

সব ভুলে দলিতরা মর্যাদা চান এবার। শিক্ষা-চিকিৎসা-চাকরিতে কোটা সুবিধা, জাত-পাতের বৈষম্য বিলোপসহ বিভিন্ন দাবিতে একাট্টা হচ্ছেন দলিতরা।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে নিজেদের এমন প্রস্তুতির কথা জানালেন সম্প্রদায়ের নেতারা।
 
বিডিইআরএম (বাংলাদেশ দালিত অ্যান্ড এক্সক্লুডেড রাইটস মুভমেন্ট)-এর হিসেবে, ২০০২ সালে সারাদেশে দলিত সংখ্যা ছিল ৫৫ লক্ষ। এর ঠিক ১০ বছর পরে অর্থাৎ ২০১২ সালে সমাজসেবা জরিপে জানা যায়, এ সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা দেশে ৭০ লক্ষ।
 
দলিত নারী ফোরাম সভাপতি মনি রানী দাস এবং বিডিইআরএম’র সাংগঠনিক সম্পাদক ভীমপল্লী ডেভিড রাজু বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
 
রাজু বলেন, আদমশুমারির সময় আমাদের বলা হয়েছে, অতিসত্ত্বর একটি জরিপ করে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করা হবে। আমরা সে অপেক্ষায় আছি। বর্তমানে বর্ধিত সংখ্যা জানা প্রয়োজন।

দলিতদের নিয়ে কাজ করেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।

দাবিতে একাট্টা হওয়া প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী ২৬০ মিলিয়নের বেশি দলিত রয়েছে, যা বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বলা হচ্ছে, ‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড (কাউকে বাদ দিয়ে নয়)’। অর্থাৎ দলিতসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ব্যাপকভাবে। সেখানে আমাদের দলিতরা পিছিয়ে থাকতে পারে না।
 
তিনি বলেন, দলিতরা মর্যাদা চায়। সাধারণভাবে একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয়েছে যে, রাস্তা ঝাড়ু, ময়লা পরিষ্কার, পাবলিক টয়লেট পরিষ্কার, মানুষ বা পশুর মৃতদেহ অপসারণ বা সৎকার, সাধারণ দিনমজুর হিসেবে মাঠে বা অন্যত্র যারা শ্রম দেয়- তারা দলিত। তাদের বাসস্থান আলাদা করে দেওয়া হয়। সরকারি-বেসরকারি গৃহায়ণ, বাজার ও কর্মসংস্থান, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষায় তাদের প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে সংরক্ষিত করা হয়। এর মধ্যে নারীদের অবস্থা হয় আরও নাজুক। দলিতরা এমন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চায়।  

এমন পরিস্থিতিতে দলিতরা কিছু সুপারিশ তুলে ধরতে চায় বলে জানান জাকির।

তিনি বলেন, বর্ণ ও জাত-পাতের বিষয়টিকে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। জাত-পাত ও বর্ণভিত্তিক বঞ্চনা নিরোধ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সুফল ২৬০ মিলিয়ন দলিতের সঙ্গে বাংলাদেশের দলিতরাও উপভোগ করতে পারবে। এছাড়া দলিতরা ন্যায়বিচারিক সুশাসন চায়। তাদের প্রাপ্যের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার পরিবেশ দেখতে চায়।  

এরমধ্যে দাবিগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা করে, সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। সবাইকে জানাতে চাইছেন, ‘আর বঞ্চনা নয়, নিজেদের অপরিহার্যতার মূল্যায়ন’ চান এবার।  
 
সরকারি পর্যায়ে অবশ্য আগের চেয়ে ভালো কদর পাচ্ছেন বলেও জানান মনিরানী। বারবার কোটা সুবিধা চাইছিলেন আলাপে।

তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ সেভাবে অধিকার সচেতন ছিলেন না বলে পিছিয়ে গেছি। দূরত্ব ঘোঁচাতে কোটা সুবিধা দিতে হবে আমাদের।

‘অবশ্য এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালোর দিকে আমাদের অবস্থা। তাই আশা পাচ্ছি। এখন বয়ষ্ক ভাতা, শিক্ষা ভাতা, দুগ্ধপান ভাতা পাই’- বলেন তিনি।

ইন্টারন্যাশনাল দলিত সলিডারিটি নেটওয়ার্কের (আইডিএসএন) নির্বাহী পরিচালক রিকি নরলিন্ড, অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন।
 
বাংলানিউজকে রিকি জানান, বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের বসতিতে গেছেন তিনি।
 
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, দলিতরা কেমন মানবেতর জীবন-যাপন করছে- তাদের কলোনিতে না গেলে বিশ্বাস হবে না। আমি গেছি। তাদের অমানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দেখেছি। তারা কষ্টে আছে।

রিকি বলেন, ২০-২৫ জন মানুষ মাত্র ১০ বর্গফুটের একটি কক্ষে বাস করছে। ছেলে-মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা নেই। ওয়াশরুম সুবিধা আলাদা নেই। অবিলম্বে এসব নিয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলছেন, চেষ্টা করছেন। বঞ্চিত এ শ্রেণীকে সমান তালে চলতে সহযোগিতা দিতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এটা আশার কথা।
 
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে রিকি বলেন, নেপালে দেখেছি। সেটি ছোট দেশ। তবু চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে আরও বেশি উদ্যোগ আশা করবো। দলিতরা কোটার জন্য, নিজেদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে ভারতে, নেপালে, বিভিন্ন স্থানে, যেখানে তারা আর পেরে উঠছে না। দেওয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে গেলেই কেবল কথা বলে। উন্নত সমাজের তুলনায় এখন তারা নিজেদের বেশি বঞ্চিত দেখছে বলেই পার্থক্যটুকু বুঝতে শিখেছে। তারা অধিকার সচেতন হচ্ছে। আরও আগে হলে ভালো হত। প্রাপ্তি আরও আগে থেকেই আসতে শুরু করতো।

দলিতদের নিয়ে সরকার এরমধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও নেওয়া হবে বলে জানান সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম।

দক্ষিণ এশীয় দলিত বিষয়ক পার্লামেন্টারিয়ান ফোরামের সদস্য নুরজাহান। দলিত নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন বলে বাংলানিউজকে জানান তিনি।

নুরজাহান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে দেশ পরিচালনার কথা ভাবতেও পারেন না। তিনি সমাজের বঞ্চিত-দলিত-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রমের কথা ভেবেছেন- যা ক্রমান্বয়ে সুফল বয়ে আনবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৫
এসকেএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।